আইন হলো এক ধরনের সামাজিক নিয়ম। তা বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণের দৈনন্দিন জীবন এবং গোটা সমাজের ওপর আরোপ করা হয়। খিৃস্টপূর্ব ৩৫০ বছরে প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন, আইন হচ্ছে এমন যে তা রাজার সর্বময় ক্ষমতার চেয়েও আরও অধিক শক্তিশালী। তবে আইন কেবল গুরুগম্ভীর আর কঠিন তা কিন্তু নয়, কখনো কখনো তা হাস্যরসাত্বক আর কৌতুকপূর্ণও হয়ে ওঠে।
বিশ্বের অনেক দেশে এমন হাস্যকার আইন রয়েছে আর মজার বিষয় হচ্ছে এ সম্পর্কে ব্রিটেনের একজন লেখক একটি বইও লিখেছেন। বইটির নাম ‘হাস্যকর আইন’। বই-এ বিশ্বের ২৫০টি দেশের সবচেয়ে উদ্ভট আর হাস্যকর আইন সংগ্রহ করে পাঠকদের কাছে প্রকাশ করেছে।
আমরা যদি বিভিন্ন দেশের আইন সম্পর্কে ধারণা গ্রহণ করি তাহলে মজার মজার সব আইন সম্পর্কে জানতে পারবো।
২০০৮ সালে ব্রিটেনের ইউকে টিভি ‘দেশের দশটি সবচেয়ে হাস্যকর আইনের’ বিষয় নিয়ে একটি জনজরিপ করা হয়েছে। এই হাস্যকর আইনের এ তালিকার প্রথম স্থানে যে আইনটি রয়েছে সেটি হলো পার্লামেন্ট ভবনে মৃত্যুবরণ করা আইনত নিষিদ্ধ। কী উদ্ভট আইন। কিছু কিছু আইন বিশেষজ্ঞ এই আইন প্রসঙ্গে হাস্যকর সব যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন- তাদের যুক্তি হলো, পার্লামেন্ট ভবন হচ্ছে একটি রাজপ্রাসাদ, তাই যদি কেউ এই রাজপ্রাসাদে অর্থাৎ পার্লামেন্ট ভবনে মারা যান তাহলে তার রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ রাজকীয় মর্যাদায় সমাহিত করতে হবে, কেননা তখন এটা তার একটি অধিকার। তাই অনেকে ঠাট্টা করে বলেন- পার্লামেন্ট ভবনে যে মূহুর্তে আপনার কোনো অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিবে, অবিলম্বে স্বেচ্ছাসেবক দল এসে আপনাকে পার্লমেন্টের বাইরে নিয়ে যাবে, যাতে রাজকীয় ভাবে সমাহিত হবার অধিকারটি আপনার ক্ষেত্রে আর প্রযোজ্য না হয় এবং একই সাথে মৃত্যুর কারণে শাস্তিযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হতে না হয়।
ফ্রান্সে নারীদের পাজামা পরা নিষিদ্ধ ছিল ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। হাস্যকর এই আইনটি ১৮০০ সালে কার্যকর হয়। আইনে বলা হয়েছিল যে, প্যারিসের নারীরা যদি পুরুষের মতো পাজামা পরতে চায়, তাহলে প্রথমে প্যারিসের পুলিশ দপ্তরের অনুমোদন নিতে হবে।
গত ৩১ জানুয়ারি ফ্রান্সের নারী অধিকার মন্ত্রী একটি দলিলে স্বাক্ষর করে ২০০ বছরেরও বেশি পুরাতন এই উদ্ভট হাস্যকর আইনটি বাতিল করেছেন।
তার মানে ফ্রান্সের নারীরা মাত্র মাস দুয়েক ধরে বৈধতার সাথে পাজামা পড়ছে, এর আগে পর্যন্ত যা ছিল অবৈধ। আমরা সবাই জানি প্যারিস এবং ফ্রান্স হল বিশ্বের ফ্যাশন স্টাইলের উৎস। সেখানকার নারীরা সুন্দর হতে অনেক আগ্রহী। অথচ এরকম একটি আইন এই দেশেই প্রচলিত থাকলো ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
২০১২ সালের জুলাইয়ে, ফ্রান্সের আরেকজন পার্লামেন্ট সদস্য এই আইন বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ আইন ফ্যাশন সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস আর রুচিকে অপমান করছে, বিব্রত করছে।
বর্তমানে স্মার্টফোন জনগণের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। এই ফোনে বিশেষ কিছু অপশন আছে যা নির্দিষ্ট কিছু সফটওয়ারের মাধ্যমে লক বা আনলক করতে হয়। তাই স্মার্টফোন ব্যাবহারকারীরা যার যার নিজের স্মার্টফোনটিকে আনলক করে আরো বেশি এবং সহজে বিভিন্ন মজার মজার সফটওয়ার ইনস্টল করতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় লাইব্রেরি চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করেছে যে স্মার্টফোনের বিশেষ কিছু অপশন তাদের অনুমতি ছাড়া আনলক করা যাবে না। কেননা এভাবে নির্বচারে ব্যবহার করলে তা বিভিন্ন সফ্টওয়ারের কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করবে। অবশ্য এটি ব্যবহারে একটি পূর্বশর্ত আছে, আর তা হলো টেলিযোগাযোগ কোম্পানীর
অনুমোদন ছাড়া স্মার্টফোন আনলোক করা আইনত দন্ডযোগ্য অপরাধ। এ আইনটি শুনতে যুক্তিযুক্ত মনে হয়। মার্কিন নেট ব্যবহারকারীরা বলে যে, এই আইন হলো ২০১৩ সালের সবচেয়ে হাস্যকর আইন। যেমন, যদি কোনো মানুষ জেনুইন এবং অথরাইজড একটি ভিডিও ক্রয় করে, সেটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে দেখার সুযোগ নেই। এটা কেন দেখা যাবে না বা কেন আমাদের ফোনকে আনলোক করে সংশ্লিষ্ট সফটওয়ার ইনস্টল করার অধিকার নেই?
কম্পিউটার গেম নিয়ে মজার আইনটি চালু আছে গ্রিসে। কম্পিউটার গেম বর্তমানে খুব জনপ্রিয়। বাসায় অথবা ভ্রমণ পথের যেকোনো স্থানে সময় কাটাতে চাইলে গেম খেলতে পারেন। তবে যদি আপনি গ্রিসে ভ্রমণ করেন, তাহলে মনে রাখবেন, সে দেশে পিসি গ্যাম খেলার কথা চিন্তায়ও আনবেন না। কারণ সে দেশের আইন অনুযায়ী, পিসি গ্যাম খেললে তিন মাসের জেল খাটতে হবে এবং এর সাথে ১০ হাজার ইউরো জরিমানাও গুনতে হবে।
গ্রিস সরকার জুয়া খেলা নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন আইন জারি করেছে। তবে অনেকেই বলে, যদি জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করতে চায়, তাহলে তো কেবল ক্যাফে এবং পানশালার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যথেষ্ট। অবশ্য বসায় বসে খেললে আইনের দৃষ্টিতে কোনো অসুধিবা হবে নেই। ‘হাস্যকর আইন’ বইতে লেখা আছে, থাইল্যান্ডে আন্ডারওয়ার না পরে বাইরে যাওয়া আইনত দন্ডনীয়। আবার কোমরের ওপর খোলা শরীর নিয়ে গাড়ি চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সুইডেনে খুব মজার একটি আইন আছে। সুইডেনের আইন অনুযায়ী, রাত দশটার পর টয়লেটে ফাশ করা নিষিদ্ধ। ঘ্রাণশক্তি/ বায়ু দূষণের তুলনায় সুইডেন সরকার মনে করে শব্দদূষণ আরো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। তাই যদি আপনি দশটার পর টয়েলেটে ফাশ করেন তাহলে আপনি পরিষ্কার ভাবেই আইন লঙ্ঘন করবেন এবং যথাযথ শাস্তি ভোগ করতে হবে আপনাকে।
সুস্বাদু ফল হিসেবে কাঁঠালের জনপ্রিয়তা সর্বজনবিদিত। কিন্তু ব্রুনেইতে যদি আপনি কোনো প্রকাশ্য স্থানে কাঁঠাল খাওয়া শুরু করেন তাহলে আপনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করবেন। বাসে, সাবওয়েতে, হোটেলে এবং বিমানবন্দরে কাঁঠাল খেতে নিষিদ্ধ করেছে ব্রুনেই সরকার।
সিংগাপুরের একটি আইন যা খুব কঠোর এবং তা বিশ্ববিখ্যাত। তুমি কি চুইংগাম খাওয়া পছন্দ কর? যদি কখনো সিংগাপুরে প্রকাশ্যে চুইংগাম খাও, নিশ্চিত ভাবে তুমি করাগারে যাওয়ার জন্য তৈরী থাকতে পরো। ১৯৯২ সাল থেকে সিংগাপুরে প্রকাশ্যে চুইংগাম খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন