১৯৫৪ বিশ্বকাপের হাঙ্গেরি দল তথা 'মাইটি ম্যাগেয়ার্স' এর কথা কে না জানেন।সে বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ফাইনালে হার অর্থাৎ 'মিরাকল অফ বার্ন' এর পরও প্রায় সবাই মানে যে এই দলটি সর্বকালের সেরা দলগুলোর একটি।
কোচ সেবেসের নতুন ৪-১-১-৪ ফরমেশনে রিতিমত প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে ঝড় তুলে দিত হাঙ্গেরিয়ানরা।দিবেনাই বা কেনো, সেই গোল্ডেন টিমের গোল্ডেন বয় যে ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সেরা ইউরোপিয়ানদের একজন, 'দ্যা গ্যালাপিং মেজর'
ঠিকই তো। ৮৫ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৮৪ গোল করা পুসকাসই তো তাদের সাফল্যের কারণ হওয়ার কথা।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ভুল!পুসকাস নিঃসন্দেহে সেরা ইউরোপিয়ান ফুটবলারদের একজন,একই সাথে জাতীয় দলেও!কিন্তু পুসকাসের সাথে আর একজন আছেন,যাকে ছাড়া হয়ত পৃথিবী সেই ম্যাজিকাল দলটি দেখত না।তিনি হলেন পুসকাসের আড়াই বছরের ছোট,স্ট্রাইকিং পার্টনার: ককসিস!
সময়ে সময়ে অনেক ফুটবল লিজেন্ডকেকে দেখেছে পৃথিবী, যাদের বেশিরভাগই আছেন অন্তরালে।
গ্যারিঞ্চা যেমন পেলের আড়ালে,বার্গক্যাম্প যেমন অঁরির পেছনে ঠিক তেমনই ককসিস, স্বদেশী পুসকাসের সাফল্যে।
১৯ বছর বয়সে প্রফেশনাল ক্যারিয়ার শুরু আর ২১ বছর বয়সেই ক্লাবের হয়ে ৯৪ ম্যাচে ৭০ গোল!স্ট্যাটিস্টিকই বলে কতটা লেথাল অর্থাৎ মারাত্মক ছিলেন তিনি!
হনভড আর্মিতে যোগ দেয়ার পর তার সাথে জুটি হয় পুস্কাসের,দুই গোলমেশিন এর জোরেই নতুন গড়া দলটি ছ সিজনের মাঝে তিনবার লীগ চ্যাম্পিয়ন।
পুসকাস ছিলেন অপেক্ষাকৃত বেশি ট্যালেন্ট।আজিলিটি,শুটিং আক্যুরেসি,পাওয়ারে ছিলেন অনন্য আর সাথে তার ছিল ডিফেন্স গুড়িয়ে দেবার মত ক্ষুরধার ফুটবল ব্রেন।
অপরদিকে ককসিস ছিলেন একটু বেশিই লম্বা।খেলতে পারতেন দু পায়েই,আর সবচেয়ে বড় কথা হেডিং আবিলিটি।হেডিং এত পার্ফেক্ট কিভবে হয় তা ককসিসই জানেন।তার এই হেডিং অ্যাবিলিটিরর জন্যই তো তাকে The Man with the Golden
Head বলা হয়।
পুসকাসকে টপকিয়ে তিন তিনবার হাঙ্গেরিয়ান লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ককসিস।সাথে দুবার ইউরোপের মাঝে সবচেয়ে বেশি গোল করার কৃতত্ব।
১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিয়ান বিপ্লবের পর দেশ ছেড়ে পুসকাস যখন এলেন মাদ্রিদে,ককসিস কিছুদিন পর বার্সায়।পুসকাস মাদ্রিদের হয়ে দুহাত ভরে জিতেছেন,বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস লীগ।
অপরদিকে ককসিসের কাছে তৎকালিন মাদ্রিদকে টপকিয়ে দুটো লিগ ট্রফি ছাড়া তেমন কিছুই নেই।এ জন্যই হয়তবা কিছুটা ঢাকা পরে গেছেন ককসিস।না হলে ৩২৫ ম্যাচে ২৭২ গোল আর জাতীয় দলে ৬৮ ম্যাচে ৭৫ গোল করা কোন প্লেয়ারকে মানুষ এভাবে ভোলে কিভাবে?
পুসকাসের চেয়ে অনেক বেশি গোল রেশিও ন্যাশনাল টিমে,তবুও আছেন দ্বিতীয় স্থানে,কারণ আড়াই বছরের বড় পুসকাসের অভিষেক হয়েছিল আরও আগে,খেলেছেন ১৭ ম্যাচ বেশি।
আর বিশ্বকাপে ককসিসের গোল রেশিও তো আরও বেশি(২.২) ১১ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা, সাথে দুই হ্যাট্রিক যা করার কৃতত্ব আর মাত্র তিন জনের আছে,জার্ড মুলার,জোলা এবং ফন্টেইন।
পুসকাস-ককসিস জুটির বিপক্ষে খেলতে নামলে হত,"জলে কুমির,ডাঙায় বাঘ" অবস্থা।জিবর আর বুদাই হাঙ্গেরির দুই ফ্লাংক যখন ক্রস করতেন তখন নিচ দিয়ে করবেন না উপর দিয়ে, দ্বিধাদ্বন্দ্বে পরে যেতেন।কারণ মাটিতে চাইতেন পুসকাস আর হাওয়ায় ককসিস।
এরিয়ালে এতটা শক্তিশালী ছিলেন ককসিস যে,বলা হত,দশটা ক্রসের মাঝে নয়টাই হেডারে গোল দিবেন তিনি।
আর হাঙ্গেরির কোচ সেবেসের মতে, here has never been anybody better with his head. He was an extraordinary player, one of the greatest players there’s ever been.
৭০ দশকের মাঝামাঝিতে লিওকোমিয়া এবং ক্যান্সারে জর্জরিত হয়ে পরেন ককসিস।এর পর ১৯৭৯ সালে বার্সেলোনাত এক হাসপাতেলের চার তলা থেকে পরে মারা যান (অনেকের মতে সুইসাইড) মোস্ট আন্ডাররেটেড এই স্ট্রাইকার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন