বৃহস্পতিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

চিরঞ্জীব রনেশ দাস গুপ্ত

(১৫ জানুয়ারি ১৯১২ - ৪ নভেম্বর, ১৯৯৭) সাহিত্যিক, সাংবাদিক সংগ্রামী, রাজনৈতিক কর্মী ও দেশের স্মরণীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব উদীচীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা রনেশ দাস গুপ্ত এর ১০১ তম জন্মবাষিকি উপলক্ষে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী  যুক্তরাজ্য সংসদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি I

পিতা অপূর্বরত্ন দাশগুপ্ত খ্যাতনামা খেলোয়াড় ছিলেন। কাকা নিবারণ দাশগুপ্ত ছিলেন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও পেশায় শিক্ষক। আরেক কাকা ছিলেন গান্ধীবাদী স্বদেশী। পারিবারিক পরিমণ্ডল এমন হওয়ার ফলে ছোটবেলা থেকেই দেশ, পরাধীনতা, বৃটিশবিরোধী রাজনীতি ইত্যাদির সঙ্গে রণেশ দাশগুপ্তের ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটেছিল এবং পরবর্তী জীবনে এই রাজনৈতিক সচেতনতা তাকে চালনা করেছিল।

১৯২৯ সালের রাঁচির (বিহার) স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বাঁকুড়ার কলেজে ভর্তি হন। এ সময় অনুশীলন দলের সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে ও তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বাঁকুড়া কলেজ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলে তিনি কলকাতায় এসে সিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু পুলিশের উৎপাতে লেখাপড়ায় বিঘ্ন হওয়ায় বরিশালে এসে ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হন। থাকতেন তার মাতুল সত্যানন্দ দাশের বাড়িতে, ইনি কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা। ১৯৩৪ সালে তার পিতা অবসর গ্রহণ করলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের গাউরদিয়া গ্রামে পৈতৃক বাড়িতে সবাই বসবাস করতে শুরু করেন, পরে ওই গ্রাম পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। তখন সবাই ঢাকা শহরে চলে আসেন এবং সংসার চালানোর জন্য বাধ্য হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে রণেশ দাশগুপ্তকে সাংবাদিকতার চাকরি নিতে হয়।

বিখ্যাত পত্রিকা ‘সোনার বাংলা’য় সাংবাদিক জীবনের মধ্য দিয়ে তার সাংবাদিক জীবনের শুরু। তার লেখক জীবনের শুরু হয় এসময়। সেকালের ঢাকা সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য বিখ্যাত ছিল। তিনি তরুণ সাহিত্যিক সোমেন চন্দ, অচ্যুত গোম্বামী, কবি কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত প্রমুখের বন্ধুত্ব লাভ করেন ও নানা রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপৃত হন।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রাজনৈতিক কারণে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। গোটা পাকিস্তানি আমলে তিনি বহুবার কারাবাস করেছেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময়ে তিনি জেলে ছিলেন এবং সেখানেই তিনি নাট্যকার মুনীর চৌধুরীকে ‘কবর’ নাটক লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ‘কবর’ নাটকটি তাদের চেষ্টায় কারাগারে মঞ্চস্থ হতে পেরেছিল। কারামুক্তির পর ১৯৫৫ সালে তিনি ‘সংবাদ’ পত্রিকায় সাংবাদিকতার চাকরি গ্রহণ করেন। এ পত্রিকাকে ব্যাপক অর্থে প্রগতির মুখপত্র করে তুলতে তার অবদান ছিল বিরাট। তার সাহিত্যিক খ্যাতি ঘটে এ সময়েই, ‘উপন্যাসের শিল্পরূপ’ (১৯৫৯) নামে একটি বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ রচনার জন্য। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষ পালনের সময়ে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়, ১৯৬২ সালে ছাড়া পান, আবার কারারুদ্ধ করা হয় ১৯৬৫ সালে, ছাড়া পান ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সুবাদে। ১৯৬৯ সালে বিপ্লবী কথাশিল্পী সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লাহ কায়সারসহ একঝাঁক তরুণ উদীচী গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন, দেশ স্বাধীন হলে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭৫ সালের ১ নভেম্বর কলকাতায় একটি সভায় যোগ দিতে গিয়ে সেখানে থেকে যেতে বাধ্য হন, কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে সামরিক শাসন চালু হয়েছিল। তারপর বাংলাদেশ নানা বিপর্যয় ও উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়। তিনি আর ফিরে আসেননি, স্বেচ্ছানির্বাসিতের জীবন বেছে নিয়েছিলেন I


তিনি কয়েকটি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। ইংরেজি ও উর্দুভাষা উত্তমরূপে আয়ত্ত করেছিলেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের অধিকাংশই মননশীল প্রবন্ধ ও অনুবাদের।
====প্রবন্ধগ্রন্থ====
উপন্যাসের শিল্পরূপ(বঙ্গাব্দ ১৩৬৬)

·      শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে (বঙ্গাব্দ ১৩৭৩)

·      ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তি সংগ্রাম(১৯৭২ খ্রি.)

·      আলো দিয়ে আলো জ্বালা(১৯৭০ খ্রি.)

·      আয়ত দৃষ্টিতে আয়ত রূপ

অনুবাদ

·    ফয়েজ আহমদ ফয়েজের কবিতা (১৯৬৯ খ্রি.)

সম্পাদনা

·   জীবনানন্দ দাশের কাব্যসমগ্র

৪৬ বছরের দীর্ঘ পথ চলায় উদীচী



দেশে তখন বিরাজ করছে পাকিস্তানী শাসন। দেশের সিংহভাগ সম্পদ মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী মহলের দখলে। ধর্মান্ধতা, কুপমন্ডূকতা গ্রাস করে ফেলেছে গোটা জাতিকে। দেশব্যাপী চলছিল নৈতিকতা বিধ্বংসী কার্যকলাপ।

রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, নজরুলকে করা হয়েছিল দ্বিখন্ডিত, বাঙালিত্বের চেতনাকে করা হয়েছিল নিষ্পেষিত। তখন পাকিস্তানী শাসন শোষণের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছিল বাংলার আপামর সংগ্রামী জনতা। একটি কালজয়ী গণঅভ্যুত্থান উঁকি ঝুঁকি মারছিল। ঠিক সেই সময় দেশের গণসংগীতের অন্যতম পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক ঔপন্যাসিক সত্যেন সেনের নেতৃত্বে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী (২৯ অক্টোবর, ১৯৬৮)।

উদীচী শুধুই একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন নয়। উদীচী একটি আন্দোলন। উদীচী কেবল সংস্কৃতি চর্চা করে না, গণমানুষের সংস্কৃতি চর্চার পথও নির্দেশ করে। সংস্কৃতির হাতিয়ার ব্যবহার করে জাতীয় মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে ঢাকা নগরীর উত্তর প্রান্তের নারিন্দায় শিল্পীকর্মী সাইদুল ইসলামের বাসায় সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, গোলাম মোহাম্মদ ইদু, কামরুল আহসান খান, মোস্তফা ওয়াহিদ খান প্রমুখের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় উদীচী গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

শিল্পী সংগ্রামী সত্যেন সেনের দীর্ঘ চিন্তার ফসল উদীচী। তিনি খুব সচেতনভাবেই উদীচী নামটি নির্বাচন করেছিলেন। উদীচী অর্থ উত্তর দিক বা ধ্রুবতারার দিক। দিক হারা নাবিকেরা যেমন উত্তর দিকে ধ্রুবতারার অবস্থান দেখে তাদের নিজ নিজ গন্তব্য স্থির করেন- তেমনি এদেশের সংস্কৃতি তথা গণমানুষের সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক আন্দোলন সবকিছুই উদীচীকে দেখে তার চলার পথ চিনতে পারবে। এছাড়া বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় আবাসের নাম উদীচী, নামকরণের ক্ষেত্রে এটিও বিবেচিত হলো। উদীচী দেশ ও জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাসমূহকে উপলব্ধি করবে, এ সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করবে, তাদেরকে এই দুঃখ কষ্টের কারণসমূহ মোকাবেলা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা যোগাবে এবং আবার তাদেরকে নতুনতর সংগ্রামের জন্য তৈরি করবে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে। উদীচী সমাজ সচেতন, সমাজ পরিবর্তনের নিয়মসমূহ ও কারণসমূহ সম্পর্কে সচেতন। উদীচী কর্মীরা শুধু নিজেরাই সচেতন হওয়া নয়, জনগণকে সচেতন করাকেও কর্তব্য মনে করে। এসব কারণেই উদীচী অপরাপর সাংস্কৃতিক সংগঠন থেকে আলাদা।

উদীচী’র জন্মই হয়েছিল গণসঙ্গীত দিয়ে। সহজভাবে গণমানুষের নিকট যাওয়া যায় একমাত্র গণসঙ্গীতের মাধ্যমেই। তাই এদেশের গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার একাগ্র শক্তি, আদর্শ ও আত্মত্যাগের মহান ঐতিহ্যের গর্বিত বাহক উদীচী’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, এদেশের মেহনতি মানুষের বন্ধু, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ সত্যেন সেনের সাবলীল উচ্চারণ-

“মানুষের কাছে পেয়েছি যে বাণী
তাই দিয়ে রচি গান
মানুষের লাগি ঢেলে দিয়ে যাব
মানুষের দেয়া প্রাণ।”

গণঅভ্যূত্থানের প্রাক-পর্বে উদীচী’র গান হলো মিছিলের সাহসী যৌবনের প্রণোদনা। ঐ বছরই ঢাকার মঞ্চে প্রথম নাটক করল উদীচী। নাম ‘আলো আসছে’। ঊনসত্তরে ছাত্রনেতা আসাদ শহীদ হলেন। আসাদের শার্ট শামসুর রাহমানের কবিতায় হলো পতাকা আর আসাদের জীবনদানকে গান ও নাটকে প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করল উদীচী। সত্তরের জলোচ্ছ্বাস ও নির্বাচন, দু-স্থানেই উদীচী রাখল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। উদীচী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো “মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য” নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল। স্টেনগানের গুলির মতোই বেজে উঠলো উদীচী’র কণ্ঠ। স্বাধীনতা উত্তরকালে সাম্যবাদী সমাজ বিনির্মাণে উদীচী গণমানুষকে জাগ্রত করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করল। জেলায় জেলায় শাখা প্রশাখায় বিস্তৃত উদীচী সংস্কৃতির অবিনাশী শক্তি নিয়ে যখন কর্মকান্ড পরিচালনা করছে তখন এল চুয়াত্তরের সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ। উদীচী দুর্ভিক্ষ পীড়িত বিপন্ন মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। এল পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট। সপরিবারে নিহত হলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ব্যক্তি মুজিবের সাথে নিহত হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অর্জনসমূহ। জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হলো জাতীয় চার নেতাকে। আহত হলো পবিত্র সংবিধান। পরিকল্পিতভাবে ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দেওয়া হলো। রাজনীতি ও সংস্কৃতি চর্চা নিষিদ্ধ হলো সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের নষ্ট চিন্তার আদেশে।  পিছনে গমন  করা বাংলাদেশ সেনা শাসকদের পরিপূর্ণ পরিচর্যায় এবং বিশ্বদানব সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতায় প্রসব করল সাম্প্রদায়িকতা। রাজনীতি থেকে শুরু করে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক মনোজগৎ পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিস্তৃত করা হলো এই সদ্যজাত সাম্প্রদায়িকতা। এর মধ্যে সুস্থতা যখন নির্বাসিত, বঙ্গবন্ধু যখন নিষিদ্ধ, তখন উদীচী ১৯৭৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর মাহমুদ সেলিম রচিত ‘ইতিহাস কথা কও’ সাহসী গীতিআলেক্ষ্যে উপস্থিত করল বাঙালির মহাকাব্য ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। ১৯৭৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রমনায় ছয় ফুট দীর্ঘ মাইকের স্ট্যান্ডকে মঞ্চে দাঁড় করিয়ে অনুষ্ঠান করল উদীচী। সেদিন বঙ্গবন্ধুর প্রতীকী উপস্থাপনায় রমনায় সমবেত সকলে নতুন করে দ্রোহে উৎসাহিত হলো।

১৯৭৮ সালে যখন সেনা সরকার যাত্রাকে নিষিদ্ধ করল, মন্দিরে প্রতিমা ভাঙল মৌলবাদীরা, তখন উদীচী সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে নামল। ঘোষণা দিল দ্বিতীয় যুদ্ধের। এবারের যুদ্ধ সাম্প্রদায়িকতা ও সা¤্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে। মাঠে ময়দানে, কলে-কারখানায়, প্রান্তবর্তী জনগোষ্ঠীর অনাদৃত প্রাঙ্গণে উদীচী’র গান, নাটক, কবিতা পরিবেশিত হলো। সেখানে ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির বিরুদ্ধে উদীচী’র বীণায় ধ্বনিত হলো রুদ্রের বীণা।

রক্তাক্ত পতাকা, ক্ষত-বিক্ষত সংবিধান, বিবর্ণ মুক্তিযুদ্ধের অর্জন, বিপন্ন মূল্যবোধ, ভোগবাদের প্রলোভন, পুঁজিবাদের দানবীয় উত্থান, সামরিক স্বৈরাচার, নষ্ট রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতা সব  মিলিয়ে আশির দশকের বাংলাদেশ যেন অচেনা প্রান্তর। উদীচী আরো ধ্বংসের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হলো। মানবিক মূল্যবোধের সর্বোদয় জাগৃতি ও বিকাশে শিল্পীর দায়িত্ব থেকে  গৃহীত হলো উদীচী’র বিচিত্র কর্মসূচী। উর্দি শাসনের বিরুদ্ধে উন্মাতাল বাংলাদেশের শত সহ¯্র বিক্ষোভে উদীচী সম্পৃক্ত হলো সর্বাত্মক শক্তিতে। বিশ্ব বেহায়ার খপ্পর থেকে মুক্ত হয়ে জাতি পেল প্রত্যাশিত ’৯১ এর গণতন্ত্র। অথচ মুক্তির মহিমা থেকে বঞ্চিত থাকলো মানুষেরা। বরং নানামাত্রিক সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িকতা স্থান  পেল রাষ্ট্রের নীতিমালায়। চর্চিত হলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। ফলে মৌলবাদী চিন্তাচেতনা বিকশিত হলো সর্বত্র। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীর করতলগত হলো।

স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পর পরই শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে শুরু হয় যুদ্ধাপরাধ বিরোধী অভিযাত্রা। তিনি একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিরুদ্ধে গোটা  জাতিকে সংঘটিত করার  চেষ্টা করেন। উদীচী সে আন্দোলনেরও সামনে থেকে গতি সঞ্চার করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি মঞ্চগুলোতে উদীচী’র শিল্পীকর্মীদের পরিবেশিত গান, নাটক ছিল আন্দোলনকারীদের প্রেরণার উৎস। ইতিহাস বিকৃতকারীদের দোসর রাজাকার, যারা লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত লাল-সবুজ পতাকাবাহী গাড়িতে চড়ে জাতিকে কলঙ্কিত করেছে, স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পরে হলেও তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো এ সকল আন্দোলনেরই ফসল। বিচারের শেষে রায় নিয়েও যখন টালবাহানা শুরু হয়, তখন দেশের সচেতন তরুণ প্রজন্মের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ আন্দোলন সৃষ্টি করে শাহবাগের ‘গণজাগরণ মঞ্চ’, যেটির প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে উদীচী’র নেতৃবৃন্দ ছিলেন প্রাণভোমরা। পরে সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশের আনাচে-কানাচে যাতে প্রাণসঞ্চার করেন উদীচী’র সকল স্তরের কর্মীরা।

কোন জাতিকে  ধ্বংস করতে হলে সর্বাগ্রে বিলীন করতে হয় তার সংস্কৃতিকে। আর এ মর্মবাণী উপলব্ধি করেই প্রতিক্রিয়াশীল অন্ধকারের শক্তি বারবার আঘাত হেনেছে উদীচী’র উপর। স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছে প্রগতির চাকা। তারা ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরে  দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলনে বোমা মেরে কেড়ে নিয়েছে ১০ জন শিল্পী কর্মীকে, ২০০৫ সালে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে হত্যা করে নেত্রকোণা উদীচী’র হায়দার ও শেলীসহ মোট ৭ জনকে,  আহত  হয় আরো অনেকে । এখনো বিভিন্ন জায়গায় চলছে নানামুখী হামলা, অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া, চোখ রাঙানি। কিন্তু ধর্মান্ধ মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি যতই চক্রান্ত করুক, যত রক্তই ঝরাক না কেন উদীচী’র ধমনী কখনো রক্তশূন্য হবে না। বরং আরো দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠবে দেশীয় দু:শাসন আর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।

আজ বিচ্যুতিহীন সংগ্রামী শিল্পীকর্মীর সমাবেশ উদীচী। উদীচী সকল অন্যায়-অবিচার, কুপম-ূকতা, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এবং প্রগতির পক্ষে লড়াইয়ে সবার আগে সোচ্চার হয়েছে। এই অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিকামী, স্বেচ্ছাসেবী জাতীয় গণ-সাংস্কৃতিক সংগঠনটিকে তার এই ঋদ্ধ, সাহসী ও বলিষ্ঠ পথ চলার স্বীকৃত স্বরূপ ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’- এ ভূষিত করা হয়। এই অর্জন শোষিত-নিপীড়িত-বঞ্চিতের, এই অর্জন গণমানুষের। ৪৬ বছরের গৌরবোজ্জ্বল সিঁড়ি বেয়ে মুক্তির নিশানায় এগিয়ে যাবে উদীচী। উদীচীর জন্মের প্রত্যয় শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ আমরাই করবো এবং বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িকই রাখবো- এই হোক আমাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অঙ্গীকার।

জয় উদীচী। জয় হোক কৃষক শ্রমিক মেহনতি জনতার।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ

অকুতোভয় বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার




১৯৩২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মাষ্টারদার প্রীতিলতাকে বললেন, পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের নেতৃত্ব তোমাকে নিতে হবে।প্রীতিলতার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রাত্রে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে সফল হন।কিন্তু বিপ্লবী প্রীতিলতা গুলিবিদ্ধ হন। এ অবস্থায় ধরা পড়ার আগে সঙ্গে রাখা সায়ানাইড বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। কারণ ধরা পড়লে বিপ্লবীদের অনেক গোপন তথ্য ব্রিটিশ পুলিশের মারের মুখে ফাঁস হয়ে যেতে পারে।

প্রীতিলতা মারা যাওয়ার আগে মায়ের কাছে লিখেছিলেন, ‘মাগো, অমন করে কেঁদোনা! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভারে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা!

তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উৎসর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?????’

************************************************

কিন্তু দুখের বিষয় আমরা অনেকেই এই মহীয়সী নারী কে চিনি ও না আর চিনলেও তার আত্মত্যাগ এর কথা স্মরণ করি না...!!!!!!!

চে গুয়েভারা : শুধু আইকন নাকি একটা মতবাদ?



ধরা যাক, আমার ঘরে মার্কস বা অ্যাঙ্গেলসের ছবি টাঙানো আছে। অথবা ধরা যাক, লেনিন, স্ট্যালিন বা মাও সে তুং আছে। কী মানে তৈরি হয়?
অথবা ধরা যাক আমার ঘরে বলিভিয়ার জঙ্গলে ঘোরা চে, ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে চে অথবা চে'র যে কোনো ছবি টাঙানো আছে। এর মানেই বা কী তৈরি হয়?
কেউ ঘরে লেনিন, মাও বা মার্কসের ছবি টাঙানোর চেষ্টা করেছেন কি না জানি না। মনে মতো একটা পোস্টার সাইজ ছবি পেতে এই ঢাকা শহরে আপনাকে ঘেমে যেতে হবে। যদি না আজিজ মার্কেটের রবিন আহসান সম্প্রতি এদের কোনো পোস্টার না ছেপে থাকে। কিন্তু চের ছবি খুঁজুন। আপনি আমেরিকায় থাকেন, আর ব্রিটেনে, ঢাকা কি বরিশালে চে'র ছবি সহজেই পাবেন। সে ছবি অনায়াসে বাঁধিয়ে ঘরের দেয়ালে এঁটে দিতে পারেন।
ধরা যাক, আপনার বাড়ি কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ বা রাজশাহী। আপনার দেয়ালে চে'র ছবি। কেউ কোনো সন্দেহ করবে? আপনি যে মতবাদে বিশ্বাসী তা নিয়ে কারো মনে কোনো সন্দেহ তৈরি হবে? কেউ আপনার দ্বারা আক্রন্ত বোধ করবে? উত্তর না বাচক হবে বলেই আমার ধারণা। কিন্তু দেয়ালে মাও সে তুংয়ের ছবি টাঙিয়ে দেখুন। আপনি নিমেষে কত মানুষের সন্দেহ, ভীতি আর বিরোধিতার মুখে পড়েছেন।
কারো ছবি টাঙানোর অর্থ তাহলে তৈরি হয়? ঘরে ঘরে, দেয়ালে দেয়ালে রাজনীতি চলে। মণীষা কৈরালা, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ঐশ্বরিয়া রাই, কার্ল মার্কস, অনুকুল ঠাকুর, লেনিন, মাও সে তুং, চে গুয়েভারা যাকেই বেছে নেন। একটা অর্থ তৈরি হবে। সেটা কী?
চে গুয়েভারার জন্মদিন উপলক্ষে ব্লগে বেশ কয়েকটি পোস্ট হয়েছে। পারভেজ চৌধুরী পাঁচ বা ততোধিক পোস্ট দিয়েছেন। সুন্দর একটি লেখা দিয়েছেন ফারহান দাউদ। লেখাগুলো আমাকে একটা ভাবনায় ফেলে দিলো। দেখলাম, ব্লগে যেখানে মার্কসবাদের বিরোধিতা খুব চালু ব্যাপার সেখানে চে'কে নিয়ে এতো লেখা কারো বিরক্তি বা বিরোধিতা তৈরি করতে পারলো না। তাহলে বিপ্লবী চে'র ইমেজ বিপ্লবের বদলে আমাদের সামনে অন্য কোনো ইমেজে হাজির হয়েছেন? তিনি কি এখন যথেষ্ট বিপ্লবী নন? প্রতিক্রিয়াশীলদের ঘাটানোর যথেষ্ট ক্ষমতা তার নেই?
আজিজ মার্কেটে হোসিয়ারি শিল্প বিকাশের সুফল হিসাবে চে'র ছবি কত সহজেই না আমাদের বুকে পিঠে ঠাঁই করে নিয়েছে। কোর্ট পিন সহ নানা সুভ্যেনিরে চে ভাল আইটেম। চে ক্যাপ, চে ক্যাফে, চে শার্ট, চে পাইপ। কত কিছু। মার্কিন সমাজে যেখানে মার্কসবাদ মোটামুটি নিষিদ্ধ, কিউবা শত্রু দেশ, ফিদেল শত্রু ব্যক্তি সেখানেও চে তরুণদের মধ্যে বড় আইকন। সমাজের কর্তারা চে ইমেজ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত কি না বোঝা যায় না। কিন্তু মাও সে তুং বা লেনিন চে'র জায়গা নিয়ে কী হতো? একটু ভাবা দরকার।
আমি কি কোথাও ভুল করছি? যে প্রাকটিসিং মার্কসিস্ট। লাতিন আমেরিকার জনগণের আন্দোলনে তার বড় ভূমিকা। চে'র প্রথম জীবনের মোটর সাইকেল ডায়েরিজ আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছিল। বীরত্ব, সাহস আর কষ্টে একাকার হয়ে তার শেষ জীবন আমাকে গভীরভাবে তাড়িত করেছিল। চে' যতদিন দিন বেঁচেছিলেন ততোদিন সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দালালদের শত্রু ছিলেন। তাকে হত্যা না করা পর্যন্ত শত্রুরা থামেনি। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তিনি শেষদিন পর্যন্ত সোচ্চার ছিলেন। তাহলে, এখন সাম্রাজ্যবাদ তাকে নিয়ে ভীত নয় কেন?
চে কি একজন সক্রিয় মার্কসবাদী নাকি একটি মতবাদের প্রবক্তা?
চে কি বাস্তবতাবাদী বিপ্লবী প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে নাকি রোমান্টিসিস্ট করে তোলে?
চে কি নির্বিবাদী মার্কসিস্ট ইমেজ তৈরি করে?
চের ইমেজ কি সাম্রাজ্যবাদীরা নতুন করে তৈরি করেছে?
চে কেন মার্কস-বিরোধীদের মধ্যেও সমান জনপ্রিয়?
চে কে ভালোবাসতে কি মতবাদ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না?
চে কি একটা স্টাইল?
চে কে তাহলে?


কার্টেসিঃ "মাহবুব মোর্শেদ"

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ



হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ (ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৩০) বাংলাদেশের সাবেক সেনা প্রধান, এককালীন প্রধান সামরিক প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি। তিনি জাতীয় পার্টি নামক রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বর্তমানে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) উপদলের নেতা। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন হতে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচিত সরকারের অধীনে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন কালে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন জারীর মাধ্যমে দেশ শাসন করেন। দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুন:প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে তিনি ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে সংসদীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে তিনি স্বপ্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ভোটপ্রার্থী হিসাবে অংশ গ্রহণ করেন এবং পরে ৫ (পাঁচ) বৎসরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে গণবিক্ষোভের চাপে এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনের অভাবে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

জন্ম ও শৈশব

ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৩০ তারিখে তিনি রংপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।[২] তিনি রংপুর জেলায় শিক্ষাগ্রহণ করেন এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে এরশাদ

১৯৫২ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬০ - ১৯৬২ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কেন্দ্রে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি কোয়েটার স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি শিয়ালকোটে ৫৪ ব্রিগেডের মেজর ছিলেন। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি লাভের পর ১৯৬৯ - ১৯৭০ সালে ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর কমান্ড্যান্ট ও ১৯৭১ - ১৯৭২ সালে ৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর কমান্ড্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় এরশাদ ছুটিতে রংপুর ছিলেন। কিন্তু, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে তিনি পাকিস্তান চলে যান[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]। পাকিস্তান থেকে আটকে পড়া বাঙালিরা যখন ১৯৭৩ সালে দেশে ফিরে আসে তখন তিনিও প্রত্যাবর্তন করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর সময় আগ্রা ক্যান্টনমেন্টে স্টাফ কোর্সে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে এরশাদ

পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পর ১৯৭৩ সালে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অ্যাডজুটান্ট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১২ ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে তিনি কর্নেল ও ১৯৭৫ সালের জুন মাসে সেনাবাহিনীতে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭৫ সালের ২৪ অগাস্ট ভারতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান ও Deputy Chief of Army Staff হিসেবে নিয়োগ পান। ১৫ অগাস্ট সামরিক অভ্যুত্থানের পর এরশাদ বাংলাদেশের দিল্লি মিশনের মাধ্যমে দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা জানিয়ে বার্তা পাঠান।[৩]
রাষ্ট্রপতি এরশাদ

৩০ মে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর, এরশাদের রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২৪ মার্চ ১৯৮২ সালে এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৩ সাল নাগাদ তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। ঐ দিন তিনি দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ.এফ.এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন। এরশাদ দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালু করেন এবং ১৯৮৫ সালে প্রথম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জামায়াত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে যদিও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এই নির্বাচন বয়কট করে। সাধারণ নির্বাচনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্রপতি ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে এই সংসদ বাতিল করেন। ১৯৮৮ সালের সাধারণ নির্বাচন সকল দল বয়কট করে। এরশাদের স্বৈরাচারের বিরূদ্ধে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে সকল বিরোধী দল সম্মিলিতভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ১৯৮৬

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন , ১৯৮৬ (অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ ১৫ অক্টোবর,১৯৮৬) জয়লাভ করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এ নির্বাচনে ১৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। বাছাই –এ কোন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাদ না পড়ায় বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ জন। ৪জন প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ১২ জন ছিল।

১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ১২জন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেনঃ ১। জনাব অলিউল ইসলাম চৌধুরী (সুক্কু মিয়া) ২। আলহাজ্ব মাওলানা খায়রুল ইসলাম যশোরী ৩। আলহাজ্ব মেজর (অব) আফসার উদ্দিন ৪। জনাব মুহাম্মদ আনছার আলী ৫। জনাব মোহাম্মদুল্লাহ (হাফেজ্জী হুজুর) ৬। জনাব মোহাম্মদ খলিলুর রহমান মজুমদার ৭। জনাব মোঃ আব্দুস সামাদ ৮। জনাব মোঃ জহির খান ৯। লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবঃ) সৈয়দ ফারুক রহমান ১০। সৈয়দ মুনিরুল হুদা চৌধুরী ১১। স্কোঃ লিঃ (অবঃ) মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী ১২। জনাব হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ

[৪]
নব্বইয়ের পরে এরশাদ

ক্ষমতা হারানোর পর এরশাদ গ্রেফতার হন এবং ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না-আসা পর্যন্ত কারারূদ্ধ থাকেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। বি.এন.পি সরকার তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং সাজাপ্রাপ্ত হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ছয় বছর আবরুদ্ধ থাকার পর ৯ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান। তার প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ২০০০ সালে তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার মধ্যে মূল ধারার তিনি চেয়ারম্যান।


তথ্যসূত্র

জাতীয় পার্টির ওয়েবসাইট
বঙ্গভবনের ওয়েবসাইট
Ahmed, Fakhruddin (1994)। Critical times, memoirs of a South Asian diplomat (1st সংস্করণ)। University Press, Dhaka। আইএসবিএন 9840512293।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী




বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর একটি শাখা। এই বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে ডিসেম্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বাঙালি সেনা ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়। বর্তমানে এই বাহিনীর সামর্থ্য প্রায় ৩০০,০০০ সদস্য।

ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য সেনাবাহিনীর মতো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর আদলে গঠিত হয়েছে এই বাহিনী । অবশ্য এই বাহিনী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর কৌশলগত পরিকল্পনা কার্যপ্রণালী, প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এবং নন-কমিশন্ড অফিসার প্রশিক্ষণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে৷ এটি গোলন্দাজ, সাঁজোয়া ও পদাতিক ইউনিট দ্বারা সজ্জিত৷

অধিকন্তু এই বাহিনী, শান্তি-রক্ষী বাহিনী হিসাবে তার সামর্থ্য উন্নত করতে উৎসাহী এবং সেই লক্ষে মার্কিন বাহিনীর সাথে একযোগে কাজ করছে৷

গঠন/প্রতিষ্ঠা

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট-এর বাঙালি সৈন্য ও অফিসার এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যান্য অংশ হতে যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন তাদের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনী গঠিত হয়। ১১ এপ্রিল (১৯৭১) বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী(অস্থায়ী) তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ভাষণ দেন৷ ঐ ভাষণে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করে এম. এ. জি. ওসমানীকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন৷[১] উল্লেখ্য যে ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারী ও সরকার গঠন করা হয় এবং পরবর্তীকালে ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শপথ গ্রহণ করে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ এপ্রিল গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার, ওসমানীকে করা হয় মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক। ওসমানীর নির্দেশনা অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। প্রতিটি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে এক একজন সেনাবাহিনীর অফিসারকে নিয়োগ দেয়া হয়। বিভিন্ন সেক্টর ও বাহিনীর মাঝে সমন্বয়সাধন করা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে যোগাযোগ রাখা, অস্ত্রের যোগান নিশ্চিত করা, গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা - প্রভৃতি কাজ সাফল্যের সাথে পালন করেন ওসমানী। ১২ এপ্রিল থেকে এম. এ. জি. ওসমানী মন্ত্রীর সমমর্যাদায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন৷ রণনীতির কৌশল হিসেবে প্রথমেই তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে নেন এবং বিচক্ষণতার সাথে সেক্টরগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন৷ এই বাহিনীর গেরিলা যুদ্ধের জন্য নিয়জিত অংশকে বলা হতো গণবাহিনী যা সাধারণ জনগণ হতে বাছাইকৃত লোকবল নিয়ে গঠিত হয়। এবং নিয়মিত যুদ্ধের জন্য ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর ইত্যাদি বাহিনীর লোকবল নিয়ে একটি নিয়মিত বাহিনী গোড়ে তোলা হয়। এই নিয়মিত বাহিনীর জন্য তিনটি ব্রিগেড গঠন করা হয়। সেগুলো হল:

জেড ফোর্স - অধিনায়ক ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং এটি গঠিত হয়েছিল ১ম, ৩য় এবং ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই জুলাই।
কে ফোর্স - অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মোশাররফ এবং এটি গঠিত হয়েছিল ৪র্থ, ৯ম এবং ১০ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে আগস্ট।
এস ফোর্স - অধিনায়ক ছিলেন মেজর সফিউল্লাহ এবং এটি গঠিত হয়েছিল ২য় এবং ১১শ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে সেপ্টেম্বর।

ইথিওপিয়ার সুরি জাতির নিষ্ঠুর সৌন্দর্য চেতনা




আফ্রিকার দরিদ্র দেশ ইথিওপিয়া। সেখানকার সুরি জাতির মধ্যে প্রচলিত অদ্ভূত ও নিষ্ঠুর এক সৌন্দর্য চেতনা। বয়ঃসন্ধিকালে এরা এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে খুব জোরে মেয়েদের বেশিরভাগ দাঁত ভেঙে দেয়। রক্ত ভেসে যাওয়া অবস্থাতেই এরপর ক্রিকেট ব্যাটের মতো দেখতে একটা জিনিস মুখে বসিয়ে দেওয়া হয়।

দাঁত ভেঙে তার মধ্যে ডিস্ক (ব্যাট) ঢুকিয়ে নিচের অংশের ঠোঁট তার মধ্যে জড়িয়ে সুন্দর হওয়ার এক রীতি সেখানে চালু আছে। প্রচণ্ড ব্যথা লাগলেও মোটা অঙ্কের পণ পাওয়ার জন্য মেয়েদের এটা করতেই হয়।

একে বলা হয় লিপ প্লেট। যে মেয়ের লিপ প্লেট যত বড় হবে, বিয়েতে তার মা-বাবা তত পণ পাবেন। পণ হিসেবে মেলে গরু। সেই লোভে মেয়ের অসহ্য যন্ত্রণাতেও মা-বাবা বেশ খুশিই হন। এই জাতির ছেলেদের অবশ্য এতটা কষ্ট করতে হয় না। শরীরে ছুঁচের মাধ্যমে রঙ মাখলেই বিবাহযোগ্য হয়ে যায় ছেলেরা। আর মেয়েদের সহ্য করতে হয় অসহ্য যন্ত্রণা, বদলে মেলে লিপ প্লেট আর পণ।

ডেইলি মেইলে গতকাল ইথিওপিয়ার সুরি উপজাতির এমন খবর ও ছবি প্রকাশ পাওয়ার পর সাইবার জগতে তর্ক শুরু হয়েছে। ফেসবুক থেকে টুইটার, ইনস্টাগ্রামে এই ছবি দেদারছে শেয়ার হচ্ছে। সঙ্গে প্রতিবাদও হচ্ছে।

বুধবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

এক ট্রাফিক জ্যামে গাড়ির কবরস্থান !





জ্যাম আর জ্যামের অসহনীয় দুর্ভোগের কথা বোঝাতে শুধু ঢাকা শহরের নাম নিলেই হবে। মাইলের পর মাইল গাড়ির দীর্ঘ সারি যেভাবে নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকে, তাতে মনে হয় পথেই কেটে যাবে অনন্তকাল!


সত্যি সত্যিই যদি এমন হয়, কোনো এক ব্যস্ত দিনে বাস-গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছেন! সেই লাইনও মাইল পাঁচেকের কম নয়। সবাই ইঞ্জিন বন্ধ করে অপেক্ষা করছে কখন কাটবে এই বন্দিদশা। কিন্তু সেই অপেক্ষা আর শেষ হয় না।

এভাবেই কেটে গেল একদিন, দু’দিন, এক সপ্তাহ, একমাস। যেখানকার জ্যাম সেখানেই আছে। এর মধ্যেই আটকাপড়া একটি প্রাইভেট কারের মেয়ের সঙ্গে প্রেম হলো এক বাসযাত্রী ছেলের। সেই প্রেমও চলল বছর দু’য়েক। ওই জ্যামের আশেপাশে ঘুরে ঘুরে তারা প্রেম করে। স্বপ্ন দেখে, একদিন এই জ্যাম কেটে যাবে আর তারা সাজাবে তাদের সুখের সংসার।

কিন্তু দিন যায়, জ্যাম কাটে না। শেষে সবার সিদ্ধান্তে সেখানেই তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিল। মেয়ের গাড়িতে সাজানো হলো বাসর ঘর। বছর ঘুরতেই তাদের কোল আলো করে ফুটফুটে দেবশিশু। যুগ পার হয়, জ্যাম সেখানেই থেকে যায়।

শিশু তখন কিশোর থেকে তরুণ, তরুণ থেকে যত বড় হয়, সেই প্রেমিক যুগল হয় বুড়ো। এভাবে একযুগ, দুইযুগ, বছর এখন ৭০। ততদিনে তারা গত হয়েছেন, ঠিক একই জায়গায় এখন তাদের ছেলে-ছেলেবউ। তাদেরও বড় বড় ছেলেপুলে। বয়স হয়েছে, কিন্তু অপেক্ষা কাটেনি। প্রজন্ম ঘুরে অপেক্ষা এখন নতুনের চোখে। কিন্তু সেই জ্যাম এতটুকু নড়েনি, ঠিক সেখানেই আছে!

হ্যাঁ, অতি কাল্পনিক গল্প এটি। তবে গল্পের কাহিনী কাল্পনিক হলেও, ঘটনাটি সত্যি।

৭০ বছরের পুরনো জ্যামটি লেগেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
 সময়। বেলজিয়ামের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থান নিয়েছিল মার্কিন সেনাদল। সেসময় তাদের ছেড়ে যাওয়া গাড়ির দীর্ঘ জ্যামটি এখনও লেগে আছে বর্তমান বেলজিয়ামের একটি বনে।

প্রাচীন এ জ্যামকে বলা হয় ‘গাড়ির কবরস্থান’।

অকার্যকর কিছু আইন




অনেক দেশে অনেক রকমের আইন রয়েছে। যার অনেক আইন এখন কার্যকর আবার অনেক আইন শুধু আইন বইয়েই লিপিবদ্ধ। অনেক প্রয়োজনীয় আইন কার্যকর না থাকলেও উদ্ভট ও হাস্যকর বেশ কিছু আইন পৃথিবীতে এখনো কার্যকর রয়েছে। আবার এমনও আইন যা সামাজিক দৃষ্টি ভঙ্গি অনুসারে অন্যায় অনেক কাজকেও বৈধতা দেয়।

তার মধ্যে কয়েকটি তুলে ধরা হল…………………
১। অ্যামেরিকায় ওক্লোহামায় আপনি কুকুরকে ভেংচি কাটতে পারবেন না, ভেংচি কাটলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের হাতে আটক হতে পারেন।

২। বজেমান মন্টেনায় সূর্যাস্তের পর বাড়ির সামনের যায়গায় সকল প্রকার যৌন কার্যকলাপ আইন পরিপন্থী।

৩। ম্যাসাচুসেটসে অনেক পুরনো আরেকটা আইন রয়েছে। গির্জায় গিয়ে কেউ চীনা বাদাম খেতে পারবে না। চীনা বাদাম খেতে গেলে খোসা ভাঙতে শব্দ হয় বলেই এই আইনের প্রবর্তন করা হয়েছিল। আমেরিকার কানেকটিকাট রাজ্যে কড়া আইন রয়েছে, কোনো বাচ্চা পা ওপরে তুলে হাতে হেঁটে রাস্তা পেরোতে পারবে না। এক সময় ছোটদের এ ধরনের প্রবণতা বেশি ছিল বলে কর্তৃপক্ষ এই আইন প্রবর্তনে বাধ্য হয়েছিল।

৪। আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটা অদ্ভুত আইন প্রচলিত আছে। তা হল, পুরুষ নারীর সাথে ভালোবাসার অভিনয় করলে জরিমানা হবে ২৫ ডলার। এ আইনে আরো আছে যে, পুরুষদের শহরের এদিক-সেদিক অযথা ঘোরা ও নারীদের সঙ্গে ভালোবাসার ভান করা যাবে না! আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা আইন আছে, প্রকাশ্যে কোনো ছেলেকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখা গেলে ২৫ পয়সা জরিমানা, এই ২৫ পয়সা জরিমানা গুনেই ১৯২১/১৯৫০ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা প্রেম করতো । আইনটি এখনো আছে তবে কার্যকারিতা নাই। তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার থেকে বই নেয়ার পর নির্দিষ্ট দিনে ফেরত না দিলে অতিরিক্ত প্রতিদিনের জন্য মাত্র ২০ পয়সা জরিমানা আদায় করা হয় এখনও।

৫। অ্যারিজোনায় সাবান চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে শাস্তি হলো, সেই সাবান দিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত চোরকে গোসল করানো, যতক্ষণ পর্যন্ত না সাবানটা পুরোপুরি শেষ হয়।

৬। সৌদি আরবে দরিদ্র হওয়া আইনত নিষিদ্ধ। যদি কোন সৌদি নাগরিক যথাযথ আইনসম্মত আয়-রোজগার না করেন তাহলে তাকে কারাগারে বন্দি রাখার বিধান রয়েছে।

৭। পর্তুগালে সমুদ্রে মূত্রত্যাগ করা কে আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

৮। দক্ষিণ ক্যারোলিনায় রবিবারে কোর্ট চত্বরে কোন স্বামী তার স্ত্রী কে প্রহার করলে সেটা আইন পরিপন্থী নয়।

৯। নিউইয়র্কে কোন বিল্ডিং থেকে লাফ দেয়ার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড।

১০। শিকাগো শহরে ১৭ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত সিটি হলের সামনে দিগম্বর বা উলঙ্গ হয়ে প্রতিবাদ করা যায়।

১১। সানফ্রানসিসকো ও ক্যালোফরনিয়ায় ব্যবহৃত জাঙ্গিয়া দিয়ে গাড়ি পরিষ্কার একেবারেই আইনের বিরুদ্ধে।

১২। লুইসিয়ানাতে কেউ তার আসল দাঁত দিয়ে যদি কাওকে কামড়ে দেয় তবে সেটা ছোট অপরাধ। কিন্তু যদি কেউ তার লাগানো দাঁত দিয়ে আক্রমণ করে তবে সেটা চরম অপরাধ।

১৩। ফ্লোরিডায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টায় পরে জনসন্মুখে বাতকর্ম ছাড়া (বায়ু ছাড়া) নিষিদ্ধ।

১৪। ম্যাসাচুসেটসে গোসল ছাড়া বিছানায় যাওয়া নিষেধ (অন্য আইনে আছে রবিবারে গোসল করা যাবেনা)।

১৫।ওহিও অঙ্গরাজ্যের অক্সেফার্ডে কোনো পুরুষের পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে পোশাক খোলা মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ।

১৬। ইংল্যান্ডে হাউজ অব পার্লামেন্টের সামনে মৃত্যুবরণ করাটাও বেআইনি।

১৭। লস এঞ্জেলসে কোন ক্রেতার সামনে যদি কোন ওয়েটার বলে ‘আমি একজন অভিনেতা’ তবে সেটা বেআইনি।

১৮। টেক্সাসে কাওকে গুলিবিহীন বন্দুক দিয়ে হুমকি দেয়াও বেআইনি।

১৯। ফ্রান্সের ক্যানে, জুরি লুইস মুখোশ নিষেধ।

২০। পর্তুগালে সাগরে প্রস্রাব করা আইন বিরোধী।

২১। সাউথ ক্যারোলিনায় অববাহিত মেয়েদের এডিবল প্যান্টি পড়া স্বীকৃত নয়।

২২। কেন্টুকিতে পকেটে করে আইসক্রিম নেয়া নিষেধ।

২৩। লোয়া-তে একটানা ৫ মিনিট চুমু খাওয়া নিষেধ।

২৪। ইলিনইসে কোন পোষা প্রাণীকে জ্বলন্ত সিগারেট দেয়া নিষেধ।

২৫। ইন্দোনেশিয়ায় হস্তমৈথুন সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। কেউ ধরা পড়লে এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।

২৬। সান স্যালভাডরে মাতাল গাড়ি চালকেকে ক্রস ফায়ারে মৃত্যুর বিধান রাখা আছে।

২৭। সিঙ্গাপুরে চুইং গাম অবৈধ।

২৮। উত্তর ক্যারোলিনায় মৃত ব্যাক্তির নামে শপথ নেয়া নিষেধ।

উল্লেখ্য, উপরের অনেক আইন কার্যকর নেই। তবে এগুলো এখনো মজার বা বিস্ময়কর আইন হিসেবে আলোচিত হয়ে আছে।

উদ্ভট ও হাস্যকর,কিন্তু মজার কিছু আইন



আইন হলো এক ধরনের সামাজিক নিয়ম। তা বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে জনগণের দৈনন্দিন জীবন এবং গোটা সমাজের ওপর আরোপ করা হয়। খিৃস্টপূর্ব ৩৫০ বছরে প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন, আইন হচ্ছে এমন যে তা রাজার সর্বময় ক্ষমতার চেয়েও আরও অধিক শক্তিশালী। তবে আইন কেবল গুরুগম্ভীর আর কঠিন তা কিন্তু নয়, কখনো কখনো তা হাস্যরসাত্বক আর কৌতুকপূর্ণও হয়ে ওঠে।

বিশ্বের অনেক দেশে এমন হাস্যকার আইন রয়েছে আর মজার বিষয় হচ্ছে এ সম্পর্কে ব্রিটেনের একজন লেখক একটি বইও লিখেছেন। বইটির নাম ‘হাস্যকর আইন’। বই-এ বিশ্বের ২৫০টি দেশের সবচেয়ে উদ্ভট আর হাস্যকর আইন সংগ্রহ করে পাঠকদের কাছে প্রকাশ করেছে।
আমরা যদি বিভিন্ন দেশের আইন সম্পর্কে ধারণা গ্রহণ করি তাহলে মজার মজার সব আইন সম্পর্কে জানতে পারবো।
২০০৮ সালে ব্রিটেনের ইউকে টিভি ‘দেশের দশটি সবচেয়ে হাস্যকর আইনের’ বিষয় নিয়ে একটি জনজরিপ করা হয়েছে। এই হাস্যকর আইনের এ তালিকার প্রথম স্থানে যে আইনটি রয়েছে সেটি হলো পার্লামেন্ট ভবনে মৃত্যুবরণ করা আইনত নিষিদ্ধ। কী উদ্ভট আইন। কিছু কিছু আইন বিশেষজ্ঞ এই আইন প্রসঙ্গে হাস্যকর সব যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন- তাদের যুক্তি হলো, পার্লামেন্ট ভবন হচ্ছে একটি রাজপ্রাসাদ, তাই যদি কেউ এই রাজপ্রাসাদে অর্থাৎ পার্লামেন্ট ভবনে মারা যান তাহলে তার রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ রাজকীয় মর্যাদায় সমাহিত করতে হবে, কেননা তখন এটা তার একটি অধিকার। তাই অনেকে ঠাট্টা করে বলেন- পার্লামেন্ট ভবনে যে মূহুর্তে আপনার কোনো অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিবে, অবিলম্বে স্বেচ্ছাসেবক দল এসে আপনাকে পার্লমেন্টের বাইরে নিয়ে যাবে, যাতে রাজকীয় ভাবে সমাহিত হবার অধিকারটি আপনার ক্ষেত্রে আর প্রযোজ্য না হয় এবং একই সাথে মৃত্যুর কারণে শাস্তিযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হতে না হয়।

ফ্রান্সে নারীদের পাজামা পরা নিষিদ্ধ ছিল ২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। হাস্যকর এই আইনটি ১৮০০ সালে কার্যকর হয়। আইনে বলা হয়েছিল যে, প্যারিসের নারীরা যদি পুরুষের মতো পাজামা পরতে চায়, তাহলে প্রথমে প্যারিসের পুলিশ দপ্তরের অনুমোদন নিতে হবে।
গত ৩১ জানুয়ারি ফ্রান্সের নারী অধিকার মন্ত্রী একটি দলিলে স্বাক্ষর করে ২০০ বছরেরও বেশি পুরাতন এই উদ্ভট হাস্যকর আইনটি বাতিল করেছেন।
তার মানে ফ্রান্সের নারীরা মাত্র মাস দুয়েক ধরে বৈধতার সাথে পাজামা পড়ছে, এর আগে পর্যন্ত যা ছিল অবৈধ। আমরা সবাই জানি প্যারিস এবং ফ্রান্স হল বিশ্বের ফ্যাশন স্টাইলের উৎস। সেখানকার নারীরা সুন্দর হতে অনেক আগ্রহী। অথচ এরকম একটি আইন এই দেশেই প্রচলিত থাকলো ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে।
২০১২ সালের জুলাইয়ে, ফ্রান্সের আরেকজন পার্লামেন্ট সদস্য এই আইন বিলুপ্তির আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ আইন ফ্যাশন সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস আর রুচিকে অপমান করছে, বিব্রত করছে।

বর্তমানে স্মার্টফোন জনগণের মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। এই ফোনে বিশেষ কিছু অপশন আছে যা নির্দিষ্ট কিছু সফটওয়ারের মাধ্যমে লক বা আনলক করতে হয়। তাই স্মার্টফোন ব্যাবহারকারীরা যার যার নিজের স্মার্টফোনটিকে আনলক করে আরো বেশি এবং সহজে বিভিন্ন মজার মজার সফটওয়ার ইনস্টল করতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় লাইব্রেরি চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে একটি নতুন আইন প্রণয়ন করেছে যে স্মার্টফোনের বিশেষ কিছু অপশন তাদের অনুমতি ছাড়া আনলক করা যাবে না। কেননা এভাবে নির্বচারে ব্যবহার করলে তা বিভিন্ন সফ্টওয়ারের কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব লঙ্ঘন করবে। অবশ্য এটি ব্যবহারে একটি পূর্বশর্ত আছে, আর তা হলো টেলিযোগাযোগ কোম্পানীর

অনুমোদন ছাড়া স্মার্টফোন আনলোক করা আইনত দন্ডযোগ্য অপরাধ। এ আইনটি শুনতে যুক্তিযুক্ত মনে হয়। মার্কিন নেট ব্যবহারকারীরা বলে যে, এই আইন হলো ২০১৩ সালের সবচেয়ে হাস্যকর আইন। যেমন, যদি কোনো মানুষ জেনুইন এবং অথরাইজড একটি ভিডিও ক্রয় করে, সেটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে দেখার সুযোগ নেই। এটা কেন দেখা যাবে না বা কেন আমাদের ফোনকে আনলোক করে সংশ্লিষ্ট সফটওয়ার ইনস্টল করার অধিকার নেই?
কম্পিউটার গেম নিয়ে মজার আইনটি চালু আছে গ্রিসে। কম্পিউটার গেম বর্তমানে খুব জনপ্রিয়। বাসায় অথবা ভ্রমণ পথের যেকোনো স্থানে সময় কাটাতে চাইলে গেম খেলতে পারেন। তবে যদি আপনি গ্রিসে ভ্রমণ করেন, তাহলে মনে রাখবেন, সে দেশে পিসি গ্যাম খেলার কথা চিন্তায়ও আনবেন না। কারণ সে দেশের আইন অনুযায়ী, পিসি গ্যাম খেললে তিন মাসের জেল খাটতে হবে এবং এর সাথে ১০ হাজার ইউরো জরিমানাও গুনতে হবে।
গ্রিস সরকার জুয়া খেলা নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন আইন জারি করেছে। তবে অনেকেই বলে, যদি জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করতে চায়, তাহলে তো কেবল ক্যাফে এবং পানশালার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যথেষ্ট। অবশ্য বসায় বসে খেললে আইনের দৃষ্টিতে কোনো অসুধিবা হবে নেই। ‘হাস্যকর আইন’ বইতে লেখা আছে, থাইল্যান্ডে আন্ডারওয়ার না পরে বাইরে যাওয়া আইনত দন্ডনীয়। আবার কোমরের ওপর খোলা শরীর নিয়ে গাড়ি চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সুইডেনে খুব মজার একটি আইন আছে। সুইডেনের আইন অনুযায়ী, রাত দশটার পর টয়লেটে ফাশ করা নিষিদ্ধ। ঘ্রাণশক্তি/ বায়ু দূষণের তুলনায় সুইডেন সরকার মনে করে শব্দদূষণ আরো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। তাই যদি আপনি দশটার পর টয়েলেটে ফাশ করেন তাহলে আপনি পরিষ্কার ভাবেই আইন লঙ্ঘন করবেন এবং যথাযথ শাস্তি ভোগ করতে হবে আপনাকে।
সুস্বাদু ফল হিসেবে কাঁঠালের জনপ্রিয়তা সর্বজনবিদিত। কিন্তু ব্রুনেইতে যদি আপনি কোনো প্রকাশ্য স্থানে কাঁঠাল খাওয়া শুরু করেন তাহলে আপনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করবেন। বাসে, সাবওয়েতে, হোটেলে এবং বিমানবন্দরে কাঁঠাল খেতে নিষিদ্ধ করেছে ব্রুনেই সরকার।
সিংগাপুরের একটি আইন যা খুব কঠোর এবং তা বিশ্ববিখ্যাত। তুমি কি চুইংগাম খাওয়া পছন্দ কর? যদি কখনো সিংগাপুরে প্রকাশ্যে চুইংগাম খাও, নিশ্চিত ভাবে তুমি করাগারে যাওয়ার জন্য তৈরী থাকতে পরো। ১৯৯২ সাল থেকে সিংগাপুরে প্রকাশ্যে চুইংগাম খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়।

জানা-অজানা অদ্ভুদ মজার কিছু আইন



• ইন্দোনেশিয়ায় হস্তমৈথুনের শাস্তি হলো মুন্ডচ্ছেদ!!
• আমেরিকার কলাম্বিয়া প্রদেশে মেয়ের বাসর রাতে তার মার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক!!
• লেবাননের আইন অনুসারে কোন পুরুষ লোক গৃহপালিত পশুর সাথে সহবাস করতে পারে!!
কিন্তু পশুটা অবশ্যই মাদী হতে হবে!! মদ্দা পশুর সাথে সহবাস করার শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড!!
• গুয়ামের আইন অনুসারে কোন কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারেনা!!
াই কিছু লোক আছে যারা পয়সার বিনিময়ে কুমারিত্বের অভিশাপ মুক্ত করার কাজ করে!!
মেয়ের বাবা-মা সাধারনতঃ এই কাজের জন্য অনেক টাকা থরচ করেন!!
মজার বিষয় হলো এরা কাজ শেষে সার্টিফিকেট দেয়!!
• হংকং এর আইন অনুসারে কোন মেয়ের স্বামী পরকীয়া করলে তাকে সে খুন করতে পারে!!
তবে খুনটা করতে হবে খালি হাতে!!
আর যে মেয়ের সাথে পরকীয়া প্রেম করছিল, তাকে খুন করার জন্য যেকোন অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে!!

জেনে নিন চুম্বন সম্পর্কে অজানা যত মজার তথ্য




চুম্বনে দুটি দেহের উত্তেজনা বেড়ে যায়, একপর্যায়ে তারা যেন দুই দেহ এক আত্মায় বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু চুম্বন সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য আপনি হয়ত জানেন না। আর এর জন্য আমাদের এই আয়োজন।

চুম্বনের উৎপত্তি :
ইংরেজি “kiss” শব্দটি এসেছে প্রাচীন ইংরেজি শব্দ cyssan থেকে যার অর্থ চুমু খাওয়া। তবে এটি সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত নন যে cyssan শব্দটির সঠিক উৎপত্তিস্থল কোথায়। তবে ধারণা করা হয় যে চুমু খাওয়ার সময়ের আওয়াজ থেকেই এর উৎপত্তি।

রোমানরা চুমু খাওয়াকে বিভিন্ন নামে সম্বোধন করে থাকে। যেমন হাতে বা গালে চুম্বন করাকে বলে basium, ঠোঁটে চুম্বন করাকে বলে osculum এবং প্রগাঢ়ভাবে চুম্বন করাকে বলে saviolum।

তবে গ্রিকরা চুম্বনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করতো না কিন্তু ভালাবাসা প্রকাশের জন্য কিছু শব্দ ব্যবহার করত। বিশ্বস্ত ভালোবাসা যেমন পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের ক্ষেত্রে Philia, কামনাপূর্ণ ভালোবাসার জন্য eros শব্দগুলো ব্যবহার করা হত। তবে প্লেটো এক সময় ঘোষণা দেন যে কারও সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে থাকলেও eros শব্দটি ব্যবহার করতে পারবে। পাশাপাশি তিনি আরও বলেন যে সত্যিকারের ভালোবাসার ক্ষেত্রে শারীরিক মিলনের কোনো বাঁধাই থাকা উচিৎ না।

শেষ পর্যন্ত গ্রিকরা সবচেয়ে আবেগঘন আর শক্তিশালী ভালোবাসার জন্য agape শব্দটি ব্যবহার করে যা থেকে মূলত চুম্বন বা শব্দটির উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়।

চুম্বন পদ্ধতিটি যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে :
চুম্বন পদ্ধতিটি আসলে কীভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে তার সঠিক তথ্য বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেন নি। তবে ধারণা করা হয় যে আদিমকালে মা তার শিশু সন্তানকে মুখে করে খাবার খাওয়াতেন ঠিক যেভাবে পাখি তার শাবক বাচ্চাটিকে খাইয়ে থাকে। এখান থেকে চুম্বনের দৃশ্যগত সূত্রপাত। এরপরে রোমান ও গ্রিক বিভিন্ন ভাস্কর্যে দুটি মূর্তির মুখে মুখ লাগানো বিষয়টি ফুটে ওঠে। এভাবে আস্তে আস্তে এক সময়ে আলেকজান্ডার দি গ্রেট এর সময়কালে চুম্বন পদ্ধতিটি সর্বাধিক ছড়িয়ে পড়ে বলে ধারণা করা হয়।

চুম্বনের কেমিস্ট্রি :
একটি সুষ্ঠু এবং আনন্দঘন যৌন মিলনের জন্য চুম্বন একটি অতিপ্রয়োজনীয় উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে যে চুম্বনের সময়ে ডোপামিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এটি একটি শক্তিশালী হরমোন যা কোকেনের ন্যায় মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে এবং যৌন মিলনের ইচ্ছায় শরীরে এক আনন্দময় অনুভূতির সঞ্চার করে। এটি ঘুম ঘুম ভাব, অতিরিক্ত ক্ষুধা এবং প্রচুর এনার্জী উৎপাদন করে।

এছাড়া চুম্বনের ফলে শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে অক্সিটসিন নিঃসারিত হয় যা শক্তিশালী এক অনুভূতির সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানীরা শারীরিক মিলনের সময়ে বেশি করে চুম্বনের অভ্যাস গড়ে তোলার নির্দেশ দেন যার ফলে একটি সুখী ও আনন্দময় দাম্পত্যসম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে।

চুম্বনের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা :
বেশ কয়েকটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে আনন্দদায়ক এই চুম্বনের কিছু স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে। প্রতিটি চুম্বনের ফলে সৃষ্ট লালার সাথে থাকা ব্যাকটেরিয়া মানবদেহের ইমিউন পদ্ধতিকে চালিয়ে নিতে সহায়তা করে। এছাড়া চুম্বন করলে দাঁত পরিষ্কার থাকে কেননা এর ফলে লালায় থাকা বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে মুখ পরিষ্কার রাখে। চুম্বনে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়, হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তনালী প্রসারিত হয় যা অত্যন্ত স্বাস্থ্যপোযোগী। অবশ্য অসুস্থ কারও সাথে চুম্বনে জড়িয়ে পড়লে হিতে বিপরীতও হতে পারে।

চুম্বনের বিজ্ঞান :
চুম্বন বিষয়ক পড়াশোনার নাম হল ফিলেমেটোলজি। যারা এই বিষয়ে পড়াশোনা করেন তারা শুধু এর বাহ্যিক বিষয়টি নিয়েই গবেষণা করেন না এর অভ্যন্তরীণ খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন। অনেকেই বলে থাকেন যে প্রথম চুম্বনের মোহ অন্যরকম, যা কখনই ভোলা যায় না। কিন্তু বিজ্ঞান কিছুটা ভিন্ন কথাই বলে। চুম্বনে মূলত স্বাদ, শব্দ এবং গন্ধ এই ৩ টি বিষয়ই কাজ করে। তবে চুম্বনটি স্পর্শকাতর নাও হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রায় ৫৯ শতাংশ পুরুষ এবং প্রায় ৬৬ শতাংশ নারী প্রথম চুম্বনের প্রতি একেবারেই আসক্ত নন বা প্রথম চুম্বন তাদের ততটা ভালো লাগে না। আরেকটি গবেষণায় দেখা যায় যে পুরুষের তুলনায় নারীরাই চুম্বনে বেশি আনন্দ পেয়ে থাকেন।

বিশ্বের শতকরা ১০ শতাংশ মানুষই চুম্বন করেন না :
সারা বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষই চুম্বন করেন কিন্তু প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ চুম্বন ছাড়াই সরাসরি যৌন মিলনে মিলিত হন। বিভিন্ন কারণে এরা এটি করে থাকেন। তার মধ্যে একটি অদ্ভুত কারণ হল সুদানদের একটি বিশ্বাস। সুদানরা চুম্বন থেকে বিরত থাকেন কেননা তারা বিশ্বাস করেন যে মুখ হল মানুষের আত্মার জানালা সরূপ। চুম্বনের সময়ে কেউ তার আত্মাটি এই মুখ রূপ জানালা দিয়ে চুরি করে নিয়ে যেতে পারে।

আবার এস্কিমোরা বিশ্বাস করেন যে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে চুম্বন করার সময়ে তাদের মুখ দুটি একসাথে আটকে যেতে পারে। এই ভয়ে তারা শারীরিক মিলনের পূর্বে চুম্বন থেকে বিরত থাকেন।

তবে বাংলাদেশেও একটা বড় সংখ্যক মানিশ এই চুম্বনে ততটা অভ্যস্ত নন। কেননা তাদের কাছে শারীরিক মিলন কোনো শৈল্পিক বা ভালোলাগার চাহিদা নয়, এক ধরনের অতি প্রয়োজনীয় জৈবিক চাহিদা যা চুম্বন ছাড়াও সম্ভব।

চুম্বনের বিশ্ব রেকর্ড :
দীর্ঘ চুম্বনের বিশ্ব রেকর্ড করেন থাইল্যান্ডের ইকাচাই এবং লাকসানা তিরানারাত নামক দম্পতিটি। তারা ২০১৩ সালে ৫৮ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড এর একটি দীর্ঘ চুম্বন করে রেকর্ডটি গড়েন।

চুম্বন পরিপন্থি দেশ :
বিশ্বে এমনও দেশ রয়েছে যেখানে চুম্বন করা একটি দন্ডনীয় অপরাধ। মেক্সিকোতে মেনুয়েল বেরুমেন নামক একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনসম্মুখে তার স্ত্রীকে চুম্বন করায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিছু দেশে এর শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে অনেকটা পাশবিকভাবে।

The Man with the Golden Head




১৯৫৪ বিশ্বকাপের হাঙ্গেরি দল তথা 'মাইটি ম্যাগেয়ার্স' এর কথা কে না জানেন।সে বিশ্বকাপে জার্মানির কাছে ফাইনালে হার অর্থাৎ 'মিরাকল অফ বার্ন' এর পরও প্রায় সবাই মানে যে এই দলটি সর্বকালের সেরা দলগুলোর একটি।

কোচ সেবেসের নতুন ৪-১-১-৪ ফরমেশনে রিতিমত প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে ঝড় তুলে দিত হাঙ্গেরিয়ানরা।দিবেনাই বা কেনো, সেই গোল্ডেন টিমের গোল্ডেন বয় যে ছিলেন বিংশ শতাব্দীর সেরা ইউরোপিয়ানদের একজন, 'দ্যা গ্যালাপিং মেজর'

ঠিকই তো। ৮৫ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৮৪ গোল করা পুসকাসই তো তাদের সাফল্যের কারণ হওয়ার কথা।

কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ভুল!পুসকাস নিঃসন্দেহে সেরা ইউরোপিয়ান ফুটবলারদের একজন,একই সাথে জাতীয় দলেও!কিন্তু পুসকাসের সাথে আর একজন আছেন,যাকে ছাড়া হয়ত পৃথিবী সেই ম্যাজিকাল দলটি দেখত না।তিনি হলেন পুসকাসের আড়াই বছরের ছোট,স্ট্রাইকিং পার্টনার: ককসিস!

সময়ে সময়ে অনেক ফুটবল লিজেন্ডকেকে দেখেছে পৃথিবী, যাদের বেশিরভাগই আছেন অন্তরালে।
গ্যারিঞ্চা যেমন পেলের আড়ালে,বার্গক্যাম্প যেমন অঁরির পেছনে ঠিক তেমনই ককসিস, স্বদেশী পুসকাসের সাফল্যে।

১৯ বছর বয়সে প্রফেশনাল ক্যারিয়ার শুরু আর ২১ বছর বয়সেই ক্লাবের হয়ে ৯৪ ম্যাচে ৭০ গোল!স্ট্যাটিস্টিকই বলে কতটা লেথাল অর্থাৎ মারাত্মক ছিলেন তিনি!
হনভড আর্মিতে যোগ দেয়ার পর তার সাথে জুটি হয় পুস্কাসের,দুই গোলমেশিন এর জোরেই নতুন গড়া দলটি ছ সিজনের মাঝে তিনবার লীগ চ্যাম্পিয়ন।
পুসকাস ছিলেন অপেক্ষাকৃত বেশি ট্যালেন্ট।আজিলিটি,শুটিং আক্যুরেসি,পাওয়ারে ছিলেন অনন্য আর সাথে তার ছিল ডিফেন্স গুড়িয়ে দেবার মত ক্ষুরধার ফুটবল ব্রেন।
অপরদিকে ককসিস ছিলেন একটু বেশিই লম্বা।খেলতে পারতেন দু পায়েই,আর সবচেয়ে বড় কথা হেডিং আবিলিটি।হেডিং এত পার্ফেক্ট কিভবে হয় তা ককসিসই জানেন।তার এই হেডিং অ্যাবিলিটিরর জন্যই তো তাকে The Man with the Golden
Head বলা হয়।

পুসকাসকে টপকিয়ে তিন তিনবার হাঙ্গেরিয়ান লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ককসিস।সাথে দুবার ইউরোপের মাঝে সবচেয়ে বেশি গোল করার কৃতত্ব।

১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিয়ান বিপ্লবের পর দেশ ছেড়ে পুসকাস যখন এলেন মাদ্রিদে,ককসিস কিছুদিন পর বার্সায়।পুসকাস মাদ্রিদের হয়ে দুহাত ভরে জিতেছেন,বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস লীগ।
অপরদিকে ককসিসের কাছে তৎকালিন মাদ্রিদকে টপকিয়ে দুটো লিগ ট্রফি ছাড়া তেমন কিছুই নেই।এ জন্যই হয়তবা কিছুটা ঢাকা পরে গেছেন ককসিস।না হলে ৩২৫ ম্যাচে ২৭২ গোল আর জাতীয় দলে ৬৮ ম্যাচে ৭৫ গোল করা কোন প্লেয়ারকে মানুষ এভাবে ভোলে কিভাবে?

পুসকাসের চেয়ে অনেক বেশি গোল রেশিও ন্যাশনাল টিমে,তবুও আছেন দ্বিতীয় স্থানে,কারণ আড়াই বছরের বড় পুসকাসের অভিষেক হয়েছিল আরও আগে,খেলেছেন ১৭ ম্যাচ বেশি।

আর বিশ্বকাপে ককসিসের গোল রেশিও তো আরও বেশি(২.২) ১১ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা, সাথে দুই হ্যাট্রিক যা করার কৃতত্ব আর মাত্র তিন জনের আছে,জার্ড মুলার,জোলা এবং ফন্টেইন।
পুসকাস-ককসিস জুটির বিপক্ষে খেলতে নামলে হত,"জলে কুমির,ডাঙায় বাঘ" অবস্থা।জিবর আর বুদাই হাঙ্গেরির দুই ফ্লাংক যখন ক্রস করতেন তখন নিচ দিয়ে করবেন না উপর দিয়ে, দ্বিধাদ্বন্দ্বে পরে যেতেন।কারণ মাটিতে চাইতেন পুসকাস আর হাওয়ায় ককসিস।

এরিয়ালে এতটা শক্তিশালী ছিলেন ককসিস যে,বলা হত,দশটা ক্রসের মাঝে নয়টাই হেডারে গোল দিবেন তিনি।
আর হাঙ্গেরির কোচ সেবেসের মতে, here has never been anybody better with his head. He was an extraordinary player, one of the greatest players there’s ever been.

৭০ দশকের মাঝামাঝিতে লিওকোমিয়া এবং ক্যান্সারে জর্জরিত হয়ে পরেন ককসিস।এর পর ১৯৭৯ সালে বার্সেলোনাত এক হাসপাতেলের চার তলা থেকে পরে মারা যান (অনেকের মতে সুইসাইড) মোস্ট আন্ডাররেটেড এই স্ট্রাইকার।

ম্যারাডোনার গোল অফ দ্যা সেঞ্চুরি




ইংল্যান্ড এর সমর্থক রা সেই মুহুরতে নিশ্চিত ম্যারাডোনা কে দুয়ো দিচ্ছিলেন। কারন টা বলে দিতে হবে? সেই হ্যান্ড অফ গড এর কারনে।

পুরো স্টেডিয়াম কিছুক্ষণ আগের কনফিউসিং ইভেন্ট এর চরচা ঈ হয়তো করছিলো।কি হয়েছিলো ? গোলটা কি হয়েছিলো?

তবে তারপর,?

ম্যারাডোনা এঈ দুয়োরর জবাব টা দিতেই চাচ্ছিলেন।

৪ মিনিট পর।৬৬ ইয়ার্ড দুর থেকে বল পেলেন তিন প্লেয়ার ঘেরা ম্যারাডোনা। অসাধারণ দক্ষতায় বল কে পেছনে ঠেলে কন্ট্রোল করলেন তিনি।ততক্ষনে তিন দিক দিয়ে ধেয়ে আসছিলো তিন জন।লক্ষ্য চারজ করে বল নিয়ে নেয়া।

গ্যালারি তখন অবাক হয়ে দেখলো জাদুকরী এক accelaretion.

সবাইকে টেক্কা দিয়ে বল টানা শুরু করলেন তিনি।পেছনে ধেয়ে আসছে প্লেয়ার।।

ম্যারাডোনা থেকে বল কেড়ে নিতে দরকার তখন সলিড ট্যাকল।সামনে থেকে সেই ধান্ধায় এগিয়ে আসছিলেন আরেক ইংলিশম্যান। বায় ম্যারাডোনায় তখন যে গড ভর করেছিলো। শার্প টার্ন নিয়ে ঢুকে গেলেন ইন্সাইডে।লক্ষ্য গোল বার।

বাট এতোই সোজা? ম্যারাডোনার চারজে তখন আবার তিনজন।সেই মিড থেকে আসতে থাকা ভদ্রলোক,মাত্র ধোকা খাওয়া ডিফেন্ডার আর সদ্য সামনে থেকে দৌড়ে আসা ডিফেন্ডার। বল তো এবার হারাতেই হবে।

নিউ ডিফেন্ডার কে ড্রিবল করে ম্যারাডোনা তখন গোল মুখে।সিচুয়েশন তখন আরো ডেঞ্জারাস


চার দিক দিয়ে ম্যারাডোনা আবদ্ধ।তিন দিক দিয়ে ডিফেন্ডার আর সামনে কিপার।

জগত তখন দেখলো আরেক টি অবিশ্বাস্য ড্রিবল।ডান পায়ে বল টাকে কিপার এর নাগালের বাইরে নিয়ে নিলেও ম্যারাডোনা পরে গেলেন ডিফেন্ডার ট্যাকল এর মুখে।

কিন্ত সেটাকেও কলা দেখিয়ে গোল মুখে শট করে দিলেন তিনি।

পুরো জগত তখন স্তম্ভিত। এ কি হলো? এ ও সম্ভব।

হ্যা এই অসম্ভব কিছুই ছিলো গোল অফ দ্যা সেঞ্চুরি। দ্যা বেস্ট গোল

ভারত এবং মাওবাদী

                                  



আঞ্চলিক পরাশক্তি থেকে ভারত যখন বিশ্ব শক্তি হওয়ার নিরন্তর চেষ্টায় রত তখন রাষ্ট্রের চোখে দেশটির এক নম্বর শত্রু এখন দেশটির কিছু জনগন। এই শত্রু পাকিস্তান বা চীনের মতো বাইরের কোনো দেশ নয়, দেশের ভেতরেই রয়েছে এই শত্রু। বিশ্বের বৃহত্তম ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ নিজের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে নিজের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত। ভারতের মধ্যাঞ্চল তথা ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা, বিহার আর পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে চলছে এই যুদ্ধ।

অবশ্য ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্র উত্তর-পূর্ব ভারত আর কাশ্মীরে একইভাবে যুদ্ধ করছে অনেক আগে থেকেই । কিন্তু মধ্য ভারতের এই যুদ্ধের রূপ স¤পূর্ণ ভিন্ন। কাশ্মীর বা উত্তর-পূর্ব ভারতের যুদ্ধ স্বাধীনতার যুদ্ধ হলেও এ অঞ্চলের গেরিলা যোদ্ধারা চান ভারতের বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাটি বদলাতে। কারণ এই রাষ্ট্র তাদের নিজ ভূমে পরবাসী করে ফেলেছে। অরণ্যাঞ্চলে করপোরেট বাণিজ্যর নামে লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে দীর্ঘস্থায়ী বঞ্চনা আর নিপীড়নের মাধ্যমে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এই অঞ্চলে রয়েছে মূল্যবান খনিজ বক্সাইট, লৌহ আকরিক, টিন, গ্রানাইট, মার্বেল তামা, সিলিকা, ইউরেনিয়াম ও লাইমস্টোনসহ নানা ধরনের খনিজ সম্পদ। ভারত সরকার এখন অরণ্য রক্ষার বাহানায় এ অঞ্চলের হাজার বছরের বাসিন্দা ভূমিপুত্রদের উৎখাত করে কিংবা পাহাড়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে বহুজাতিক কোম্পানির মাধ্যমে এসব খনিজ সম্পদ উত্তোলন করছে। আদিবাসী এ মানুষ দেখছে তাদের জীবন-জীবিকা অর্জনের অবলম্বন পাহাড় আর বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবন-জীবিকার পথ হয়ে যাচ্ছে রুদ্ধ। মাথা গোঁজার ঠাঁই পর্যন্ত হারিয়ে ফেলছেন।

জঙ্গলে মাওবাদীদের ক্যাম্প

তাদের সামনে সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই। বঞ্চিত মানুষের এই সংগ্রাম মাওবাদী আন্দোলন নামে পরিচিত। ভারতের প্রখ্যাত লেখিকা অরুন্ধতি রায়ের মতে এই মাওবাদীরা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সশস্ত্র গান্ধীবাদী। কারণ তাদের সংগ্রাম যেমন জীবন-জীবিকা রক্ষার সংগ্রাম, তেমনি বন পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষারও সংগ্রাম। পশ্চিমবঙ্গের লালগড় থেকে শুরু করে ঝাড়খণ্ড উড়িষ্যা ছত্তিশগড় অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের বিশাল অরণ্যাঞ্চলের যারা ভূমিপুত্র তারা সবাই এখন মাওবাদী। ভারতের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরের দেয়া তথ্য মতে দেশের প্রায় ২০টি প্রদেশে মাওবাদীদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে । ভারতের ২২৩ জেলায় দুই হাজারের বেশি থানা ব্যাপক কিংবা আংশিকভাবে মাওবাদী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরাই এখন তার এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের চোখে ভারতের এক নম্বর নিরাপত্তা হুমকি।
সম্প্রতি ছত্রিশগড়ের সুকমায় মাওবাদীদের হামলায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সি আর পি এফ) এর ১৩ জন সদস্য নিহত হয়। এরমধ্যে ২ জন ছিলো উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ এলাকায় ২০১৩ সালের মে মাসে কংগ্রেস নেতা ও দলীয় কর্মীদের ওপর মাওবাদী হামলায় মারা যায় ২৭ জন। গত দুই মাস ধরে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিলো। এর আগে কংগ্রেস শাসনামলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের হামলায় ভারতের আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফ’র ৭৬ জন সদস্য নিহত হয়।

মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রণ আছে এমন এলাকাগুলোতে ভারতের প্রায় ৭৫ হাজার নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন আছে। যার মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশেষ প্রশিক্ষিত ১৫ হাজার সদস্য রয়েছে। এ অবস্থায় মাওবাদীদের সশস্ত্র সংগ্রামের শক্তি বেড়ে চলার কারণে দিল্লিকেন্দ্রিক ভারতের কোনো কোনো মহল থেকে দাবি তোলা হয় যে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিমান হামলা চালানো হোক। যদিও ভারতের বিমান বাহিনী প্রধান বলেছেন এখনো সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ভারতের বিমান বাহিনী ১৯৬৬ সালে মিজো জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা আন্দোলন দমনের জন্য বিমান হামলা চালিয়েছিল। এসব আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ভারতের শাসক শ্রেণীর মধ্যে মাওবাদীদের লড়াই-সংগ্রাম নিয়ে স্নায়ুবিক চাপ বাড়ছে। অপর দিকে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী এই লড়াই দমনের জন্য অস্ত্রসজ্জার কাজটি পুরোমাত্রায় চালিয়ে যাচ্ছে।

টহলরত সিআরপিএফ জওয়ান

ইসরাইল থেকে আনা হয়েছে লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার, থারমাল ইমেজিং ইকুইপমেন্ট এবং চালকবিহীন ড্রোন বিমান। সম্প্রতি পাহাড়ি এলাকা, জঙ্গল আর মরুভূমিতে ব্যবহারের জন্য ৫০ হাজার রাউন্ড গুলি চালাতে সক্ষম হেভি মেশিনগান কেনার চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। বিদ্রোহ দমনের কাজে এই হেভি মেশিনগান ব্যবহৃত হবে (জেন্স ডিফেন্স উইকলি ৩১ মার্চ ২০১০ )। শুধু তাই নয়, ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ৩০ জন উচ্চপদস্থ ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তাকে গুপ্ত হত্যা চালানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নেতৃস্থানীয় মাওবাদী নেতাদের হত্যা করে তাদের নেতৃত্বশূন্য করা। ছত্তিশ গড়ে মাওবাদী ও তাদের সমর্থক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় একটি মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হয়। সালওয়া জুদুম নামের এই আদিবাসীদের গ্রামের পর গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করেছে। অনেককে ধরে এনে শিবিরে আটকে রাখা হয়েছে। শুধু ছত্তিশগড়ে এ ধরনের মানুষের সংখ্যা তিন লাখের বেশি। কিন্তু এভাবে নিপীড়ন চালিয়ে আন্দোলন দমন করা যায়নি বরং বেড়েছে। শুধু ছত্তিশ গড়ে ২০০৯ সালে মাওবাদীদের সাথে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর ৪২২টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মারা যায় ৩৪৫ জন। এর মধ্যে পুলিশ ছিল ১২১ জন মাওবাদী ১৩৭ জন এবং সাধারণ গ্রামবাসী ৮৭ জন। (আনন্দ বাজার পত্রিকা ০৭ এপ্রিল ২০১০)।

ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ধারণা প্রায় ২০ হাজার মাওবাদী গেরিলা এখন নানা অঞ্চলে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। ভারতীয় শাসক শ্রেণীভুক্ত নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা শঙ্কিত এ কারণে যে, জম্মু কাশ্মীরে তিন হাজার সশস্ত্র যোদ্ধাকে মোকাবেলা করতে বিপুল পরিমাণ সৈন্য মোতায়েন করতে হয়েছে। এখন ২০ হাজার গেরিলা মোকাবেলা করা তাদের জন্য আরো বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি করেছে। ২০০৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ইন্ডিয়ার (মাওবাদী) সাথে একত্রিত হয় পিপলস ওয়ার গ্রুপ (পিডব্লিউজি) এবং মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার। এরপর থেকে তাদের আন্দোলন বেগবান হতে থাকে। সশস্ত্র হামলার তীব্র রূপের কারণে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। একের পর এনকাউন্টারের নামে বিচার বহির্ভূতভাবে অসংখ্য মাওবাদী আন্দোলনকারীকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক নিরীহ দরিদ্র যুবক যেমন আছে, তেমনি আদিবাসী যুবকরাও আছে। এর ফলে আন্দোলন দমন তো হয়নি বরং মাওবাদীদের জনভিত্তি আরো শক্তিশালী হয়েছে।

সম্প্রতি ভারতের প্রখ্যাত লেখিকা ও মানবাধিকার কর্মী অরুন্ধতি রায় মাওবাদীদের সাথে কয়েক দিন কাটিয়ে ‘ওয়ার্কিং উইথ দ্য কমরেডস’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। এ প্রবন্ধে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন নিপীড়নের যেমন চিত্র এসেছে তেমনি মাওবাদীদের যুদ্ধপ্রস্তুতি ও সামরিক প্রশিক্ষণের নানা বিবরণ এসেছে। অরুন্ধতি রায় প্রবন্ধের শুরুতে এক বর্ণনায় লিখেছেন In Dantewada, the police wear plain clothes and the rebels wear uniforms. The jail superintendent is in jail. The prisoners are free (three hundred of them escaped from the old town jail two years ago). Women who have been raped are in police custody. The rapists give speeches in the bazaar 

আমরা দেখছি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্দোলনে মাওবাদীরা সরাসরি ভূমিকা রাখছে। পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর নন্দিগ্রাম আর পূর্বমেদেনীপুরে স্থানীয় জনসাধারণের ভূমি রক্ষার যে আন্দোলন তাতেও মাওবাদীরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। মাওবাদীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কার্যত বিকল্প শাসন পদ্ধতি চালু রাখার চেষ্টা করেছে। মাওবাদী নেতা কাটেশ্বর রাও কিষেনজি সে সময় ফ্রন্টলাইন পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন তাদের লক্ষ্য মাওবাদীদের নিয়ন্ত্রিত একটি স্বাধীন এলাকা গঠন করা। যেখানে তারা বিকল্প শাসনব্যবস্থা কায়েম করবে। (ফ্রন্টলাইন ৬ নভেম্বর ২০০৯) ।

মাওবাদীদের দমনে ভারতের নানামুখী পরিকল্পনার মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার যে কৌশল গেরিলারা দেখিয়েছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে মাওবাদীরা যথেষ্ট প্রশিক্ষিত। ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীকে ফাঁদে ফেলে তাদের বলয়ের মধ্যে এনেছে। উদ্ধার করতে আসা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও নিহত হয়েছে। হামলার ধরন প্রমাণ করে এটা ছোটখাটো গেরিলাযুদ্ধ নয় বরং তা ছিল পরিকল্পিত যুদ্ধ কৌশলের অংশ। মাওবাদীদের হামলায় শুধু ভারতের আধা সামরিক বাহিনী সিআরপিএফ’র ৭৬ সদস্য মারা যায়নি, বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও মাওবাদীদের হাতে চলে গেছে। ৬ এপ্রিলের এ হামলায় ছয়টি লাইট মেশিনগান, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরকসহ অনেকগুলো মর্টার, ৭০টির বেশি একে ৪৭ রাইফেল, ভারতীয় কিছু রাইফেল, বেশ কিছু পিস্তল, গ্রেনেড ও গোলাবারুদ।

অনেক ভারতীয় বিশ্লেষক দাবি করেন মাওবাদীরা নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ থেকে অস্ত্র পাচ্ছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোকে দায়ী করার এই প্রবণতা ভারতের নতুন নয়। বাংলাদেশে-ভারতের একটি বন্ধু সরকার ক্ষমতাসীন থাকার পরও তারা বাংলাদেশকে দায়ী করেছে। তবে নেপালের মাওবাদী গেরিলাদের সাথে আদর্শিক কারণে তাদের যোগাযোগ থাকা অস্বাভাবিক নয়। ভারতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভারতের মাওবাদী গেরিলারা নেপালের গেরিলাদের মতো লাইট ইনফেন্ট্রি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। যদি মাওবাদী গেরিলাদের সাথে ভারতের গেরিলাদের সত্যিকার যোগাযোগ ঘটে থাকে তবে তা ভারতের শাসক শ্রেণীর জন্য বড় ধরনের দুঃসংবাদের কারণ হবে। নেপালের মাওবাদীরা ভারত সমর্থিত রাজার সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে নেপালের রাজনীতিতে নিজেদের অনিবার্য হিসেবে দাঁড় করিয়েছে।

নেপালের পাহাড় আর বনে এই গেরিলারা যুদ্ধ করেছে। এই অভিজ্ঞতা যদি ভারতের গেরিলারা পেয়ে থাকে তবে উত্তর-পূর্ব ভারতের চেয়েও এই যুদ্ধের রূপ হবে ভয়ঙ্কর। সন্দেহ নেই ভারত সরকার এখন সর্বাত্মকভাবে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে। কিন্তু এই সর্বাত্মক যুদ্ধের মাধ্যমে কী মাওবাদীদের পরাস্ত করা সম্ভব হবে? নিজ দেশের মানুষের সাথে এই যুদ্ধের ভবিষ্যতই বা কী? ভারতে বঞ্চিত মানুষের এই সংগ্রামের ইতিহাস অনেক পুরনো। ১৯৬৭ থেকে ৭৭ পর্যন্ত নকশাল বাড়ির আন্দোলন, পঞ্চাশের দশকে তেলেঙ্গানায় এবং ৮০র দশকে অন্ধ্র, বিহার আর মহারাষ্ট্রে এভাবে আন্দোলন গড়ে উঠেছে। ভারতের শাসক শ্রেণী কঠোরভাবে এসব আন্দোলন দমন করেছে। কিন্তু সেই আন্দোলন বারবার নতুন শক্তি নিয়ে গড়ে উঠেছে।

মাওবাদী হামলায় নিহত কংগ্রেস নেতা

মূলত ভারতে পুঁজি বিকাশের সাথে সাথে বিরাট একটি জনগোষ্ঠী নির্যাতিত, নিপীড়ত এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। মিডিয়ায় যে চাকচিক্যময় ভারতকে দেখছি এর ভেতরের চিত্রটি খুবই করুণ। আমরা শুধু কিছু তথ্য দেখে নেই ইউএনডিপি কর্তৃক প্রকাশিত দারিদ্র্য সূচকে ভারতের অবস্থান ১৮২টি দেশের মধ্যে ১৩৪তম। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতের ৪৫ কোটি মানুষ দৈনিক ১ দশমিক ২৫ ডলারের কম আয়ে জীবনযাপন করে। কর্মক্ষম জনগণের মধ্যে ১০ শতাংশ বেকার। এখনো খাদ্যের জন্য মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে হয়। ভারত সরকার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা। বর্তমান বাজেটে সরকার স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় নির্ধারণ করেছে ২২ হাজার ৬৪১ কোটি রুপি, যা মোট জিডিপি’র মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ সামরিক খাতে ব্যয় করা হবে মোট জিডিপি’র আড়াই শতাংশ।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে প্রতি বছর দূষিত পানি এবং বাতাসের কারণে মারা যায় প্রায় ৯ লাখ মানুষ। ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ঋণের টাকা শোধসহ এ জাতীয় কারণে ভারতে দুই লাখের বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছে। ২৪ লাখ মানুষ এইডসে আক্রান্ত। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তিন বছরের কম বয়সী ৪৬ শতাংশ শিশু পুষ্টিহীনতায় ভোগে। ভারতের প্রায় ৩৪ শতাংশ মানুষ নিরক্ষর। এর বিপরীতে ভারতের সমরপ্রস্তুতির দিকটি দেখা যাক। ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি ২৬ ফেব্রুয়ারি সে দেশের ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাজেটে গত অর্থবছরের চেয়ে সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রায় ৪ শতাংশ। বাজেটে সামরিক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৪ কোটি রুপি। আগামী বছরে সরকারের মোট ব্যয়ের ১৩ শতাংশ ব্যয় হবে সামরিক খাতে। গত অর্থবছরে এ ব্যয়ের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪১ হাজার ৭০৩ কোটি রুপি। এর আগের অর্থবছরে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করেছিল ৩৪ শতাংশ। যা ছিল ভারতের ৬৪ বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। গত এক দশকে ভারতে সামরিক ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ৬৯৪ কোটি রুপি। এক দশক পরে অর্থাৎ ২০০৯-১০ সালে এসে সেই ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪১ হাজার ৭০৩ কোটি রুপি। ভারত সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তাতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ হারে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। আর এতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সামরিক খাতে বরাদ্দ গিয়ে দাঁড়াবে এক লাখ ৯২ হাজার ৩৯ কোটি রুপি। অথচ ভারতে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা বিশ্বে সর্বাধিক।

ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে নিহত মাওবাদী গেরিলা
সমাজের হতদরিদ্র মানুষের জন্য ভারতের অর্থমন্ত্রী এর চেয়ে ভালো কোনো সান্ত্বনামূলক বাক্য ব্যবহার করতে পারেনি। ভারতের সমাজজীবনে এই ভারসাম্যহীনতা, বঞ্চনা আর নিপীড়নের অন্য নাম মাওবাদী আন্দোলন। ভারতের সমরাস্ত্র পাকিস্তান বা চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের আগে তা নিজ দেশের জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারতের মধ্যাঞ্চলের সশস্ত্র সংগ্রামের আসল কারণটি লুকিয়ে আছে সমরসজ্জা আর নাগরিক সেবার এই ব্যবধানের মধ্যে। সর্বাত্মক অভিযানের মাধ্যমে তা যতই দমনের চেষ্টা করা হোক না কেন তা বারবার ফিরে আসবে। ভারতের ভেতরের এই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি শিগগিরই ঘটবে না।

দেশে মোবাইল এসেছে

বাংলাদেশের বাউল গান মানুষের হৃদয়কে কতটা ছুয়ে যেতে পারে নিচের গানটি না শুনলে বোঝা যায় না ।



চীনের মহাপ্রাচীর, একটি প্রাচীন লোকগাথা



সময়টা তখন খ্রিস্টপূর্ব ২২০, আজ থেকে প্রায় ২২০০ বছরের ও বেশি আগের। ছিন সাম্রাজ্য সাম্লাতে হিমশিম খাচ্ছন সম্রাট ছিন শ্রি হুয়াং। মঙ্গোলিয়ান দস্যুদের হাত থেকে শহর, নগর আর সম্পদ বাাঁচাতে দরকার মহাপ্রাচীর নির্মাণ । মহাপ্রাচীর তৈরিতে দরকার অনেক মানুষ। কিন্তু কেউ স্বেচ্ছায় যেতে রাজি নয় মৃত্যু হতে পারে জেনে । অক্লান্ত শ্রম আর বিশ্রামের অভাবে কিছু শ্রমিকের মৃত্যু সংবাদ আসতে শুরু করেছে লোকালয়ে। কেও রাজি নয় একই মৃত্যুর কাছে যেতে । শুরু হল ধরপাকড়। যাকে যেখানে পাওয়া গেল ধরে এনে শ্রমিক হিসাবে লাগানো হল।খাবারের স্বল্পতা আর কঠিন শ্রমের কারনে বৈরি আবহাওয়াতে একে একে মারা যেতে লাগল শ্রমিকেরা। মৃতদের লাশ সেই প্রাচীরের পাশেই মাটিতে পুঁতে আবার কাজে যেতে বাধ্য করা হত বেঁচে থাকা শ্রমিকদের। ধরে আনা হত আরও শ্রমিক। সেই সময়ের এক লোককথা ।

লেডি মংচিয়াং, বা সুন্দরী নারী মংচিয়াং, চিনের দক্ষিণ অঞ্চলের এক কৃষক ঘরের মেয়ে। সুন্দরী, কর্মঠ, বুদ্ধিমতী। তার বিয়ে হয় ফান ছি লিয়াং নামের এক সুন্দর ও বিচক্ষণ যুবকের সাথে যে মংচিয়াং দের গ্রামে পালিয়ে এসেছিল সম্রাট ও তার অনুগত বাহিনীর ভয়ে। ধরে নিয়ে যেতে পারে প্রাচীর তৈরির কাজে। সুন্দর বুদ্ধিমান যুবক ছি লিয়াং, সুন্দরী মংচিয়াং এর পরিবারের নজরে পড়ে। বিয়ে হয় তাদের , দুজনের সম্মতিতে , কেননা তখন একজন আরেকজনের প্রেমে আবদ্ধ। সেই কালরাতে, ( মতান্তরে দুইদিন পরে) সম্রাটের লোকেরা ধরে নিয়ে যায় নববিবাহিত ছি লিয়াং কে ।

স্বামীকে হারিয়ে বিষণ্ণতা গ্রাস করে মংচিয়াংকে। উল আর পশমে বুনতে থাকে স্বামীর জন্য শীতের পোশাক, পরম মমতায়। পথ চেয়ে সময় কাটে তার । ছি লিয়াং আর আসেনা। একদিন স্বামীর জন্য বোনা শীতের পোশাক সাথে নিয়ে স্বামীর খোঁজে বের হয় মংচিয়াং। প্রাচীর এর কাজ তখন অনেকদুর এগিয়েছে। একদিন মংচিয়াং তার স্বামীর সহকর্মীদের দেখা পায় , তাদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে , তার স্বামী অনেক আগেই অনাহার, অত্যাচার আর কঠিন শ্রমের কারণে মারা গেছে । মংচিয়াং দু’হাত ছুড়ে পাথরে মাথা ঠুকে কাঁদতে থাকে ভালবাসার মানুষ হারিয়ে। তার চিৎকারে আকাশ বাতাসে প্রতিদ্ধনি হয় , স্তম্ভিত হয় সাগরের জল। হঠাত এক বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে সদ্যগড়া প্রাচীর এর ২০০ মাইল । সম্রাট এর আদেশে ধরে আনা হয় মংচিয়াংকে । সম্রাট তার প্রাণদণ্ড ঘোষণা করতে চান কেননা মংচিয়াং এর অদ্ভুত কান্নার মায়াবী শক্তি প্রাচীর ধ্বংস করেছে । কিন্তু তিনি মংচিয়াং এর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব করেন । আশ্চর্যের বিষয় হল এই যে , মংচিয়াং তাতে রাজি হয় । কিন্তু তিনটি শর্তে -

১) মংচিয়াং এর মারা যাওয়া স্বামীর লাশ খুজে বের করতে হবে
২) মৃত স্বামীর জন্য স্মৃতিমিনার বানাতে হবে
৩) সেই স্মৃতি মিনারে সম্রাট নিজে সহ তার সভাসদরা শ্রদ্ধা জানাবে কাল পোশাক পরে।

সম্রাট মংচিয়াং কে পাবার আশায় তাতে রাজি হয় । সব শর্ত পুরন হবার পর সম্রাট যখন তাকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যেতে চায় তখন সবার চোখ ফাকি দিয়ে মংচিয়াং দৌড়ে সমুদ্রের পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহনন করে । তার ভালবাসার প্রতি সম্মান জানাতে সমুদ্রের মধ্যে দুইটি পাথর উত্থিত হয়। একটি মংচিয়াং এর কবর , একটি তার ভালবাসার প্রতি সম্মান জানাচ্ছে । স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে এই লোকগাথা নানাভাবে ঘুরেফিরে রঙ পায় ।
 

এখনও শীতের শুরুতে হাজার হাজার কপোত-কপোতি সমুদ্রের তীরে এসে মংচিয়াং এর জন্য খাবার, ফলমূল, শীতের পোশাক, জুতা বিসর্জন দিয়ে পুজা করে সেই অদৃশ্য আত্মার পবিত্রতাকে।

মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ফেসবুক অ্যাকাউন্টের উত্তরাধিকারী


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক অ্যাকাউন্টের উত্তরাধিকারী অনুমোদন করার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষের  বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে এই সেবা চালু করার ঘোষণা দিলেও অচিরেই পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
কোন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার অ্যাকাউন্ট পরিচালনা ও সেখান থেকে বিভিন্ন মন্তব্য করা যেন সম্ভব হয় সেজন্যেই পরিবারের একজন সদস্যকে উত্তরাধিকারী করার বিষয়টি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের দেয়া ঘোষণায় বলা হয়, মনোনীত উত্তরাধিকারী ব্যক্তি প্রয়াত ব্যক্তির বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন যারা যোগাযোগের এই মাধ্যমটিতে সংযুক্ত ছিলেন না তাদের পাঠানো রিকোয়েস্টে সাড়া দিতে পারবেন। এমন কি প্রয়াত ব্যক্তির প্রোফাইল এবং ফাইলে ছবি আপলোট করাসব বিভিন্ন মন্তব্যও করতে পারবেন।

রবিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৫



আপনি শেয়ার কিনবেন। তা কি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কিনবেন?

আপনি শেয়ার কিনার সিদ্ধান্ত নিবেন ২টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে।তা হলঃ- ১)মৌলিক বিশ্লেষণ। ২) কৌশলগত বিশ্লেষণ ।

মৌলিক বিশ্লেষণ কখন প্রয়োগ করবেন?
যখন আপনি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করবেন। আর-

কৌশলগত বিশ্লেষণ কখন প্রয়োগ করবেন?
যখন আপনি স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ করবেন।
মৌলিক বিশ্লেষণ কি?
যে কোম্পানির শেয়ার কিনবেন তার মৌল ভিত্তি বা অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পর্কে জানার জন্য যে বিশ্লেষণ করা হয় ।

কৌশলগত বিশ্লেষণ কি?
বাজারের গতি প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে শেয়ার কিনা । এর সাথে কম্পানির অবস্থানের বা ভিত্তির সাথে কোন সম্পর্ক নাই ।

যেভাবে করবেন মৌলিক বিশ্লেষণঃ
এটা ৩ ভাবে করতে হয়ঃ১) দেশ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ ।
২) যে কোম্পানির শেয়ার শেয়ার কিনতে যাচ্ছেন তা যে শিল্পের অন্তর্গত অর্থাৎ কোম্পানি ঔষধ বা সিরামিক বা যে শিল্পের আওতা ভুক্ত সে শিল্প খাতকে বিশ্লেষণ ।
৩) যে কোম্পানির শেয়ার কিনতে যাচ্ছেন তার বিশ্লেষণ ।


আজ এ পর্যন্তই।

শেয়ার বাজারঃ আপনার জন্য কিছু পরামর্শ

আপনি কি বাংলাদেশের শেয়ার বাজার এ বিনিয়োগ করতে চান? বন্ধু বান্ধব এবং অফিস কলিগদের কাছে শুনেছেন, শেয়ার ব্যবসায় শুধু লাভ আর লাভ, রাতারাতি কোটিপতি। আর দশটা ব্যবসার মতো এটাও একটা ব্যবসা, যাতে ঝুঁকি আছে। বর্তমানের বিনিয়োগকারীরা যে ভাবে বিনিয়োগ করে থাকে তাকে ট্রেডিং না বলে গ্যাম্বলিং বলাই ভাল। কিন্তু আসলেই কি শেয়ার ব্যবসায় গ্যম্বলিং? না শেয়ার ব্যবসায় গ্যাম্বলিং না বরং ইনভেষ্টমেন্ট, একটি বিজনেস। একজন সফল বিজনেসম্যান হতে হলে অবশ্যই আগে ব্যবসাটা সর্ম্পকে জানতে হবে। এটার পুরা আইডিয়া নিতে হবে। নিজের ব্যবসাটাকে প্রফিটেবল বানাতে চাইলে এবং লসের হাত থেকে বাচতে চাইলে অবশ্যই খুটিনাটি সব কিছু জানতে হবে।
তবে হতাশ হবার কিছু নেই। শেয়ার ব্যবসায় বুঝে শুনে টাকা খাটালে আসলেই যথেষ্ট পরিমান লাভ আছে। শেয়ার বাজারে পুঁজি বিনিয়োগ করে বিশাল লাভবান হবার কোন সুনির্দিষ্ট বা শর্টকাট পথ নেই। তবে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চললে নিঃসন্দেহে আপনি লাভবান হতে পারবেন।
বাংলাদেশের শেয়ার বাজার

শেয়ার বাজার এ বিনিয়োগের আগে বিবেচ্য বিষয়। 

১. বাবসায়িক শিক্ষঃ যখনি আপনি একজন শেয়ার ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে দেখার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখনি আপনাকে শেয়ার ব্যবসায় বা শেয়ার বাজার সর্ম্পকে এডুকেটেড হতে হবে। নিজেকে যুদ্ধক্ষেত্রে টিকার জন্য নলেজ এর অস্ত্রে সু-সজ্জিত হতে হবে। জানতে হবে এটির আদ্যোপান্ত, মার্কেট এর সকল ফ্যাক্টর এবং নিজেকে আপটুডেট রাখতে হবে সবসময়- বিশেষ করে দেশের ইকোনোমিক এবং পলিটিকাল বিষয়। প্রথমেই মনে রাখবেন, শেয়ার ব্যবসা কোন জুয়া খেলা নয়। এখানে ব্যবসার কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। রয়েছে কিছু সুনির্দিষ্ট গানিতিক হিসাব। আপনি যদি কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের হন তবে এই গুলি বুঝতে আপনার খুবই সুবিধা হবে। আর আপনি কমার্সের স্টুডেন্ট না হলেও খুব একটা সমস্যা নেই। বাজারে এখন শেয়ার বাজার এর উপর অনেক বই পত্র পাওয়া যায়। এগুলি পড়ুন, বোঝার চেষ্টা করুণ। শেয়ার বাজার এর উপর ইন্টারনেটেও অনেক লেখা পাওয়া যায়, প্রতিনিয়ত পড়ুন এবং বুঝুন।
২. প্রতিদিন কিছু পড়াসুনা করুন এবং মার্কেট এর সাথে তা মিলিইয়ে দেখুন, মার্কেট মুভমেন্ট গুলো বোঝার চেষ্টা করুন। কিছুদিন পড়াশুনার পর যদি দেখেন বুঝতে সমস্যা হচ্ছে তবে সিকিউরিটি এক্সচেন্জ কমিশন এবং ঢাকা স্টক এক্সচেন্জ এর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ গ্রহণ করতে পারেন। এই গুলির খরচ অনেক কম। নিঃসন্দেহে উপকার পাবেন। তাছাড়া অনেক এক্সপার্ট আছেন বাংলাদেশে, তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে অনেক ফি দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রয়োজন নেই।
৩. এবার ভাল একটি স্ট্রাটেজি তৈরি করে সেটাকে ধরে নিজে নিজে সাইলেন্ট ট্রেড করুন। তার মানে আজকে একটা শেয়ার আপনার স্ট্রাটেজি অনুযায়ী কি হওয়া উচিৎ তা চিন্তা করুন এবং তার ফলাফল পরিমাপ করুন। তেমনি স্ট্রাটেজি টেষ্ট এর সময়ই আপনাকে ট্রেড ম্যানেজমেন্ট শিখতে হবে। রিস্ক – রিওয়ার্ড জানতে হবে। কখনো লসে চলে গেলে কি করবেন সেসব বুঝতে হবে। টেকনিক্যাল আর ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস করে ট্রেড নিতে হবে। অনেক সময় আপনার স্ট্রাটেজিতে ট্রেড নেবার সময় আসলেও মার্কেট এনালাইসিস করে দেখতে পাবেন আপনার স্ট্রাটেজিতে এখন ট্রেড নেয়াটা রিস্কি হয়ে যাচ্ছে। তখন ট্রেড থেকে বিরত থাকতে হবে। অথবা ট্রেড দিয়ে ফেললেও সেটাকে ম্যানেজিং করতে হবে। একটা গুরুত্ত পূর্ণ বিষয় হল অন্য কাউকে দেখে শেয়ার কেনাবেচা করবেন না। প্রত্যেকের পোর্টফোলিও ভিন্ন হয়। কোন একজন যে কারণে শেয়ার কিনছেন বা বিক্রি করছেন তা হয়তো আপনার কারণের সাথে মিলবে না।

৪. বাজারের কোন গুজবে কান দিবেন না। শেয়ার বাজার যখন ভাল থাকে তখন প্রচুর গুজব শুনা যায়।  আমার পরামর্শ হলো গুজবে কাননা দিয়ে খুবই ছোট আকারে শুরু করুন। আস্তে আস্তে প্রফিট করুন। খুব কম প্রফিট টার্গেট হলে রিস্কটাও খুব কম হয়। ওমুক কোম্পানী ১:৩ রাইট শেয়ার দিবে, তমুক কোম্পানী ৩০০% বোনাস দিবে, আর এক কোম্পানী ৬০০% ক্যাশ দিবে এ জাতীয় গুজবে কান দিবেন না।
৫. অনেকেই আছেন যারা বিও একাউন্ট কোন মার্চেন্ট ব্যাংক এ খুলে সামান্য কিছু টাকা ইনভেস্ট করে ২ গুন লন নিয়ে ট্রেড শুরু করেন। নতুন ব্যবসায় নামার অন্তত এক বছর ঋণ কোডে শেয়ার কিনবেন না। আগে ব্যবসাটা ভাল করে বুঝে শুনে তারপর ইচ্ছা হলে ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনার নিজের টাকায় লস হলে আপনার কিছু ক্ষতি হবে। কিন্তু ব্যাংক কখনোই লস নেয়না। বাংকের টাকায় শেয়ার কিনে লস হলে ব্যাংক আপনার মূল টাকা থেকেই লস সমন্বয় করবে। তখন একটা শেয়ার এর দাম কমে গেলে ব্যাংক আপনার শেয়ার ফরসড সেল করে দিয়ে তার টাকা নিয়ে নিবে আর আপনার একাউন্ট শুন্য হয়ে যাবে। হায় হায় করা ছাড়া আপনার আর কোন গতি থাকবে না। ধরা যাক, আপনি ‘কখগ’ কোম্পানীর শেয়ার ৫০ টাকায় ১ টি শেয়ার কিনলেন। পরবর্তীতে মূল্য কমে যাওয়ায় আপনি সেই শেয়ার ৩০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হলেন। আপনার ক্ষতি হলো, ( ৫০-৩০ )=২০ টাকা। কিন্তু আপনি যদি ঋণ কোডে ব্যবসা করতেন, তাহলে হয়তো ৫০ টাকায় আরও ৫০ টাকা, মোট ১০০ টাকার শেয়ার কিনতে পারতেন। তখন আপনার ক্ষতি হতো ( ৫০ – ৩০ ) * ২ = ৪০ টাকা। এরপরও আছে শেয়ার কেনাবেচার কমিশন এবং ঋণের সুদ। যা আপনার ক্ষতির পরিমান আরও বারিয়ে দিবে। সুতরাং যত আকর্ষণীই মনে হোক না কেন নতুন বিনিয়োগকারীদের মার্চেন্ট ব্যাংকের ফাঁদে পা না দিয়ে লন করে শেয়ার বাবসা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। মানি ম্যানেজমেন্ট সম্পরকে জানুন। 

৬. ভাল মৌল ভিত্তি সম্পন্ন শেয়ার ক্রয় করুণ।  যদিও এটা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক আছে। কারণ বিগত ৫/৭ বছরে দেখা গেছে ভাল মৌল ভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারের চাইতে আজে বাজে শেয়ার, এমনকি কোম্পানীর অস্তিত্ব নেই, কোন লভ্যাংশ দেয়না, এমন সব শেয়ারের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এ বিসয়ে একটা গল্প বলি, ঠিক গল্প নয় সত্যি ঘটনা,শেয়ার মার্কেট এ ট্রেডিং শেখায় এমন বহু প্রতিষ্ঠান আগে বাংলাদেশে ছিল, অবশ্য এখন তারা হারিয়ে গেছে, তো একবার এমন এক নাম করা ট্রেনিং সেন্টার এর আমন্ত্রনে সেখানে গেস্ট লেকচারার হিসাবে গল্প করতে গিয়েছিলাম। আমি যখন ক্লাসে প্রবেশ করলাম তখন ঠিক পেছনের সিট থেকে এক মাঝ বয়সি লোক দাড়িয়ে আমাকে প্রশ্ন করলেন, ভাই! ফান্ডামেন্টাল শেয়ার কি? আমি ক্লসে ঢুকেই এই জাতীয় প্রশ্ন শুনে একটু অবাক হলাম। পরে বুঝতে পারলাম সারাদিন রেডিও, টেলিভিশনে ফান্ডামেন্টাল শেয়ার এর নাম শুনতে শুনতে হয়তো তার এই আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবং শুধুমাত্র এটা শেখার জন্যই আজকে এসেছেন। প্রশ্নের উত্তরে আমি উনাকে বললাম আপনার প্রশ্নের মধ্যই আপনার উত্তর লুকিয়ে আছে। উনি বুজতে পারলেন না। আমি বললাম, ফান্ডামেন্টাল শব্দটা আস্তে আস্তে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলেন উত্তর পেয়ে জাবেন।

উনি বললেন ফান্ডা-মেন্টাল, আমি বললাম আরও আস্তে বলেন, তারপর বললেন ফান-ডা- মেন্টাল।
হা! এটাই সঠিক উত্তর! তার মানে হল যে শেয়ারে ফান্ড দিয়ে বা ফান্ড ইনভেস্ট করে আপনি মেন্টাল হয়ে জাবেন তাকেই ফান্ডামেন্টাল শেয়ার বলে।

 প্রসংঙ্গেও বলা যায়, এগুলি বাড়ার পেছনে বিনিয়োগকারীদের অজ্ঞতাই দায়ী। তাই আজেবাজে শেয়ার না কিনে ভাল মৌল ভিত্তি সম্পন্ন শেয়ার কিনুন। তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় পথে বসবেন না বরং খুব ভাল লাভই পাবেন। ভাগ্যের উপর নির্ভর করা থেকে শেয়ার বাবসার এর ভিবিন্ন দিক নিয়ে শিক্ষা গ্রহন ও এনালাইসিস আপনাকে আরও ভালো এবং consistant প্রফিট পেতে সহায়তা করবে। ইমশন কন্ট্রোল করতে শিখুন । নিজেকে কখনই ইমশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে দিবেন না। ইমশন কে নিয়ন্তন যারা করতে পারবে না তারা প্রফিট কে দেখবে হুর হুর করে নিচে নামতে এবং লস কে দেখবে হুর হুর করে উপরে উঠতে। যেকোনো স্ট্রেটাজির ক্ষেত্রেই একসাথে একসাথে অনেক প্রফিট করতে যাবেন না। মানি মেনেজ মেন্ট এর সাহায্য নিয়ে ধিরে ধিরে আগান। তাহলে শেয়ার বাবসায় এর যেকোনো ঝড় মুকাবেলা করতে আপনি সক্ষম হবেন। এই সম্পর্কিত একটা বিস্তারিত আর্টিকেল পড়ুন এখানে। 

৭. শেয়ার বাবসার খুঁটিনাটি সকল বিসয়ই বোঝার চেষ্টা করুণ। নগদ টাকা দিয়ে ব্যবসা করবেন আর কিছু বুঝতে চাইবেন না, এর চাইতে আহম্মকি আর কি হতে পারে? বোঝার সবচেয়ে সহজ পথ হলো প্রতিনিয়ত আপডেট থাকা। চোখ কান খলা রাখা। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের প্রথম দিকে এই সম্পর্কিত লেখা লেখিতে, পত্র পত্রিকাতে প্রচুর সময় দিন। সব সময় ডিএসই এর এবং ট্রেডিং সম্পর্কিত আরও অনেক ওয়েবসাইটে নজর রাখুন এবং সমস্ত ইনফরমেশন এ চোখ বুলান। প্রথম দিকে এটা খুব কঠিন মনে হতে পারে, অনেক যামেলার মনে হতে পারে। কিন্তু বছরখানেক গেলেই দেখবেন আর অত সময় দিতে হবে না, অল্পতেই বুঝতে পারবেন।

৮. অন্নের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে কখনোই শেয়ার ব্যবসায় নামবেন না। মনে রাখবেন এই ব্যবসা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিশ্চিত। আমি মনে করি, যে টাকা হারিয়ে গেলে, চলে গেলে বা নষ্ট হলে আপনার কস্ট লাগবে না সেই টাকাই শেয়ার ব্যবসায় এ ইনভেস্ট করা উচিৎ। বাপের জনি বেছে, মায়ের গহনা বেচে, কস্টের জমানো টাকা শেয়ার ব্যবসায় বা শেয়ার বাজার এ ইনভেস্ট করা কখন ই  উচিৎ নয়। এখানে যেমন প্রতি তিন দিনে লাভের সম্ভাবনা আছে, তেমনই প্রচুর ঝুঁকিও রয়েছে। তাই ব্যাংক লোন নিয়ে, জমি বিক্রি করে, অন্যের থেকে টাকা ধার করে, অলংকার বা ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে কখনোই শেয়ার ব্যবসায় নামবেন না।

৯. প্রতিদিন লাভ হোক বা লস সবসময় সেটায় ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করে রাখুন। কেন প্রফিট হলো কেন লস হলো সব লিখে রাখুন, তাহলে আপনার লস বা প্রফিটের কারণগুলার রেকর্ড থাকবে। আর সব সময় সব জান্তা লোকজন থেকে দূরে থাকুন। শেয়ার মার্কেটে এমন অনেক লোক দেখা যায়, যারা প্রচুর আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলে। প্রকৃত অর্থে তারা ৩/৪ বছর ব্যবসা করেও তেমন কিছু লাভ করতে পারে না। যারা গেম্বলার তাদের জন্য উপযুক্ত স্থান হল CASINO. আর শেয়ার ব্যবসায় হল তাদের জন্য যারা ইনভেস্টমেন্ট এ আগ্রহি এবং তা থেকে ছোট পরিমাণ প্রফিট পেয়েই খুশি হবে।  সুতরাং  এই ধরণের লোকজন থেকে কম করে হলেও ১০০ হাত দূরে থাকুন।

১০. একটা ভালো ব্রোকার এ ট্রেড করুন। নিজের স্ত্রেটেজির জন্য উপযুক্ত একটি ব্রোকার নির্বাচন করুন। বিশ্বস্ত এবং বড় সিকিউরিটি হাউজ বা বড় বিশ্বস্ত ব্যাংকে বেনিফিশিয়ারি অ্যাকাউন্ট বা বিও খুলতে পারেন। এখানে ভাল সুযোগ-সুবিধা আশা করা যায়, এবং ব্যবহারও নিঃসন্দেহে ভাল পাবেন। ফোনে ট্রেড করা, অনলাইন ট্রেডিং করা সহ আপনার জমা ও উত্তলনের সময় ও অনেক গুরুত্তপুরন। ভালো ব্রোকার এর আর একটা বড় সুবিধা হল কোন দূর্ঘটনা ঘটলে আশা করা যায় যে তারা আপনার টাকা মেরে খাবে না। আর হ্যা, নমিনি করতে কখনোই ভুল করবেন না। কারন মানুষের জীবন মৃত্যুর কথা কিছু বলা তো যায় না ! আর আপনার মোবাইল নাম্বার এবং অ্যাড্রেস উপ টু ডেট রাখুন।


উপরের এই পরামর্শগুলি নতুন বিনিয়োগকারীরা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। আশাকরি শুভ ফলাফলই পাবেন। স্টক মার্কেটে আপনার যাত্রা শুভ হোক, অনেক বেসি লাভবান হোক এই প্রত্যাশা রইল।

ঢাকা শেয়ার বাজার – সেন্টিমেন্টাল এনালাইসিস

আমরা সাধারনত স্টক এনালাইসিস এর ক্ষেত্রে দুটি এনালাইসিস নাম শুনে থাকি।
১। ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস
২। টেকনিকেল এনালাইসিস।
কিন্তু আজ আমি আপনাদের আর একটা পদ্ধতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেব। যেটা একেবারেই আমার নিজের তৈরি টেকনিক। আমি এই অ্যানালাইসিসের নাম দিয়েছি ইনভেস্টর মাইন্ড এনালাইসিস।(এটা অনেকটা টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের মতই) যেহেতু এটা একটা নতুন ধরনের এনালাইসিস তাই আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে আমি কিছু বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করব।
যারা শেয়ার বিজনেসে নতুন আশে তারা টেকনিক্যাল বা ফান্ডামেন্টাল এনালাইসিস বোঝেন না তারা সুধু বোঝে (টি-৩ আইটেম) ৪-১০ দিনে জন্য ইনভেস্ট করে প্রফিট নেয়া। তারা চিন্তা করে আমি যেদিন থেকে শেয়ার কিনব সেদিন থেকেই দাম বাড়া শুরু করবে। তাদের এই ধারনা আশার করন হল, নতুন বিনিয়োগ কারি তখনই বিনিয়োগ করে যখন বুলিশ মার্কেট থাকে।তখন তার বুঝে না বুঝে যে শেয়ারই ইনভেস্ট করে সেটারই দাম বাড়তে থাকে এবং এটা দেখে তারা তাদের পুজি আর বাড়ায়।কিন্তু বাস্তবতা হল মার্কেট এভাবে বেশী দিন চলতে পারেনা।যথারিতি মার্কেট যখন কারেকশন শুরু হয়, তখন ঐ যে নতুন যারা না বুঝে ইনভেস্ট করেছিল তারা মাথায় হাত দিয়ে হা-হুতাস করতে থাকে। তারা টি-৩ তে যা প্রফিট করে ছিল মার্কেট কারেক্শনের কারনে তার আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না।তখন তারা অস্থির হয়ে একটা ছেড়ে আর একটা কিনতে থাকে এতে তারা আরও লস করতে থাকে। কিন্তু তারা যদি স্থির হয়ে বসে থাকত তাহলে অল্প কিছুদিনের মাঝেই লস টা কাটিয়ে উঠতে পারত।আমার মাইন্ড এনালাইসিস টেকনিক এ ঐ সকল ইনভেস্টর দের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
৫-১০ দিনের জন্য ইনভেস্ট করাকে আমি শেয়ার বিজনেস বলিনা এটা হল লটারি অথবা গেইম খেলা। কিন্তু শেয়ার বিজনেস লটারি কিংবা গেইম খেলার জায়গা না। এখানে মেধা দিয়েই বিজনেস করতে হয়। একটা কথা মনে রাখবেন, না বুঝে ইনভেস্ট করে হয়ত আপনি সাময়িক ভাবে লাভবান হতে পারবেন কিন্তু Long Term এ এটা কখনও ই ভালহতে পারেনা। আমি কখনও ই এই গেইম টাকে সাপোর্ট করিনা। কিন্তু তারপর্ ও আমাকে মাঝে মাঝে এই গেইম এ অংশ গ্রহন করতে হয় কারন এটা বাংলাদেশি শেয়ার বাজার এখানে FA/TA সব সময় কাজ করেনা। ইনভেস্টমেন্ট সাধারনত তিন ধরনের হয়ে থাকে…
১। Long term (FA) TA News Mind
২।Mid term (FA/TA)
৩।Short term (TA)
কিন্তু আমার এনালাইসিস অনুযায়ি আর ২টা আইটেম যোগ করতে চাই
৪। Short term-২ (News)
৫। Short term-৩ (Mind Analysis)

 

যে শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ ।



এই কৌশলটি বিনিয়োগকারী ও ডে-ট্রেডার উভয় শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের জন্য প্রযোজ্য। একজন বড় মাপের শেয়ার ব্যবসায়ী যদি হতে চান আপনাকে কম সময়ে বেশী লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আর্থিক ঝুঁকির মাত্রাও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে এমন শেয়ার চিহিৃত করতে হবে। নিম্ন লিখিত বিষয়সমূহের আলোকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার সমূহ কে বিবেচনার বাহিরে রাখতে পারেন।
১.যে শেয়ার সমূহের দাম সাধারণত বেশী হারে হ্রাস বৃদ্ধি হয় না।
২. যে শেয়ার সমূহ র্দীঘ দিনের ব্যবধানে লেনদেন হয়।
৩. যে শেয়ার সমূহ অতিমূল্যায়িত।
৪. এক সময়ের জনপ্রিয় শেয়ার কিন্তু বর্তমানে ঐ শেয়ারের চাহিদা নেই বা দরের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে না অথবা সন্তোষজনক লভ্যাংশও অন্যান্য প্রাপ্তির সম্ভাবনা নেই এমন শেয়ার।
৫. যে শেয়ার সাম্প্রতিক সময়েও লাভজনক ছিল কিন্তু ভবিষ্যতে লাভ অর্জনের সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে।
৬. যে শেয়ারসমূহের দাম সাধারণত বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় এবং সেই সময় আসতে এখনও অনেক দেরী।

শেয়ার ক্যাটাগরী



ভাল শেয়ার কিভাবে চিনবেন তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমি শেয়ার ক্যাটাগরী সম্বন্ধে লিখবো। আমার আগের লেখায় (কিভাবে ভাল শেয়ার নির্বাচন করবেন ?) বলেছিলাম ৫টি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ভাল শেয়ার নির্বাচন করার জন্য। ঔ পাঁচটির মধ্যে একটি হচ্ছে ক্যাটাগরী।
শেয়ার বাজারে মোট পাঁচ ক্যাটাগরীর শেয়ার আছে। ক্যাটাগরী গুলো হচ্ছে :
১। ক্যাটাগরী-এ (A)
২। ক্যাটাগরী-বি (B)
৩। ক্যাটাগরী-জি (G)
৪। ক্যাটাগরী-এন (N)
৫। ক্যাটাগরী-জেড (Z)

ক্যাটাগরী-এ :

যে সব কোম্পানী মিয়মিত বার্ষিক সাধারন সভা (AGM) করে এবং নূন্যতম ১০% বা তার চেয়ে অধিক হারে লভ্যাংশ প্রদান করে সে কোম্পানীর শেয়ার এ ক্যাটাগরীর।

ক্যাটাগরী-বি:

যে সব কোম্পানী নিয়মিত সাধারন সভা (AGM) করে কিন্তু ১০% এর কম হারে লভ্যাংশ প্রদান করে সে কোম্পানীর শেয়ার বি ক্যাটাগরীর।

ক্যাটাগরী-জি:

যে সকল কোম্পানী এখনো তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেনি সে কোম্পানীর শেয়ার জি ক্যাটাগরীর।

ক্যাটাগরী-এন:

শেয়ার বাজারে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারকে এই শ্রেনীতে রাখা হয়। (জি ক্যাটাগরী ব্যাতিত) এবং বার্ষিক সাধারনসভা ও লভ্যাংশ প্রদানের উপর ভিত্তি করে তাকে অন্য ক্যাটাগরিতে নেয়া হয়।

ক্যাটাগরী-জেড:

যে সকল কোম্পানী নিয়মিত বার্ষিক সাধারন সভা (AGM) করে না। লভ্যাংশ প্রদান করতে ব্যার্থ পুঞ্জিভুত লোকসান সঞ্চিত মুনাফাকে ছাড়িয়ে যায়। ৬মাস বা তার বেশী সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ। সে কোম্পানীর শেয়ার জেড ক্যাটাগরীর।
কোন শেয়ার কোন ক্যাটাগরীর তা জানতে এখানে ভিজিট করুন শেয়ার 
আশাকরি বুঝতে পারছেন কোনটা ভাল কোম্পানীর শেয়ার। তবে শুধু ক্যাটাগরীর উপর নির্ভর করে ভাল শেয়ার নির্বাচন করা ঠিক হবে না। এর জন্য আরো রয়েছে :
১। শেয়ার প্রতি আয় (earnings per share: EPS)
২। প্রতি শেয়ারে মুনাফা প্রদান (dividend per share: DPS)
৩। মুল্য-আয় অনুপাত (price earning ratio: P/E)
৪। মুনাফা অর্জনের হার (Dividend yield) ইত্যাদি।
আমার আগের লেখাগুলোতে বলেছিলাম শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে হলে আপনাকে কি কি করতে হবে। নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে আপনি পুরোপুরি প্রস্তুত বিনিয়োগের জন্য।
মানসিক প্রস্তুতি
শুরু করার পূর্বে বড় করে একটা শ্বাস নিন এবং নিজেকে সাহস দিন, যেন যেকোন পরিস্থিতিতে ভেঙ্গে না পড়েন। হার্টটাকে শক্ত করুন। ধের্য্যশীল হোন। এগুলো যদি না থাকতো তাহলে ১৯৯৬ সালে আমার একটা শেয়ার যখন ২৪৮ টাকা থেকে মাত্র ৩৪ টাকায় নেমে এসেছিল তখন আমার অবস্থাটা একটু চিন্তা করে দেখুন? নো রিসক নো গেইন।
ভাল শেয়ার কিনুন
ভাল শেয়ার কিনুন-এই উপদেশটা সবাই দেয়, ডিএসই’র চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে বাজারের কনিষ্ঠতম বিনিয়োগকারী। কিন্তু ভাল শেয়ার বুঝবো কিভাবে ? ভাল একটি আপেক্ষিক শব্দ। একজনের কাছে যা ভাল অন্য জনের কাছে তা নাও হতে পারে। যদি নির্দিষ্ট করে বলাই যেত উমুক শেয়ার সবচেয়ে ভাল তাহলেতো সবাই ঐ নির্দিষ্ট শেয়ারই কিনতো। তাই ভাল শেয়ার নির্বাচন করতে হবে আপনাকে।
কিসের উপর নির্ভর করে ভাল শেয়ার নির্বাচন করবেন ?
১। ক্যাটাগরী (Category)
২। যেমন শেয়ার প্রতি আয় (earnings per share: EPS)
৩। প্রতি শেয়ারে মুনাফা প্রদান (dividend per share: DPS)
৪। মুল্য-আয় অনুপাত (price earning ratio: P/E)
৫। মুনাফা অর্জনের হার (Dividend yield) ইত্যাদি।